বাংলাদেশ বুরো: বর্তমান দেশটির সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় দফায় সরকার পরিচালনা করছে দলটি। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে নজিরবিহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে অনেকে। দলের সক্রিয় ভূমিকায় না থাকলেও সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকেই এই সকল দুর্নীতিবাজ নজীর বিহীন ভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অর্থ পাচার করেছেন বিদেশে।
তবে এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা এ সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের একজন সদস্য ইউএস বেঙ্গল কে জানান, “দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অনেক সুবিধাবাদী প্রভাবশালী নেতা দুর্নীতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ যেহেতু একটি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল সেহেতু অনেক ভালো নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। এবং তাদেরকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট মূল্যায়ন করেন। তাই দেশের কথা চিন্তা করে সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজ নেতাদেরকে ছাড় দিতে চান না দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন এবং দুর্নীতিবাজ যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
প্রেসিডিয়াম সদস্যের এ বলিষ্ঠ নেতা প্রতিবেদককে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ভালোবাসেন দেশের জন্য তিনি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কাজেই দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেবেন না তিনি। সকল সেক্টরে শুদ্ধি অভিযান চলছে দুর্নীতি যেই করুক না কেন কেউ পার পাবে না সরকারের সমস্ত সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য।
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অভিযানে বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি গ্রস্ত অফিসারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়েছে। এবং বিভিন্ন সেক্টরে যারা নজিরবিহীন দুর্নীতি করেছে তারা এখন বিভিন্নভাবে বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ তাদের সম্পদ বিদেশে পাচারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
তবে বিভিন্ন সেক্টরে যে সকল সৎ অফিসার এখনো রয়েছেন তারা চাচ্ছেন এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাক, আবার দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের সেকশন বিভিন্ন লবিং করছে যাতে এই দুর্নীতির অভিযান বন্ধ করা হয়। তবে প্রভাবশালী যে সকল নেতাদের ছত্রছায়ায় এই সকল দুর্নীতিবাজরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সে সকল প্রভাবশালী নেতা আর তাদের সাপোর্ট দিতে চাচ্ছেন না। এ নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থাগুলির গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন তারা দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রণয়ন করছেন , তালিকা অনুযায়ী সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন দুর্নীতিবাজ রেহাই পাবে না সে যেই হোক না কেন।
রাজনীতিক দলের নেতাদের চাইতে সরকারি আমলা এবং বিভিন্ন সেক্টরের প্রভাবশালী অফিসাররা দুর্নীতির সাথে বেশি জড়িয়েছেন।
তবে এ পর্যায়ে এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশটির স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন তাতে এ সকল দুর্নীতিবাজরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
প্রভাবশালী দুর্নীতিগ্রস্তরা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলির উপরে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন যেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেকোন ধরনের প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকে সকল মিডিয়া।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে এর মধ্যে শেয়ার বাজারের বিয়ো হিসাবের উপরে নজর রাখছে সংস্থাগুলো যাদের অতিমাত্রায় সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের হিসাবগুলো খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
সমপ্রতি বাংলাদেশের সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে..দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২৯জুন শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের এমন অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি।’

Discussion about this post