ডেস্ক রিপোর্ট: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি পডকাস্টার ও অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ক্যান্ডেস ওউন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। বুধবার (২৩ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার সুপিরিয়র কোর্টে দায়ের করা এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওউন্স মিথ্যাচার ছড়িয়ে ব্রিজিতের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে ‘উন্মাদনা সৃষ্টির অপচেষ্টা’ চালিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্যান্ডেস ওউন্স দাবি করেছেন, ৭২ বছর বয়সি ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর জন্মনাম ছিল ‘জ্যঁ-মিশেল ট্রোগনু’—যা আসলে তার বড় ভাইয়ের নাম। তিনি আরও দাবি করেছেন, ব্রিজিত লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী হয়েছেন এবং একজন ভিন্ন পরিচয়ের ব্যক্তির জীবন চুরি করেছেন।
ম্যাক্রোঁ দম্পতির ভাষ্য অনুযায়ী, ক্যান্ডেস ওউন্স তার ‘বিকামিং ব্রিজিত’ নামে আট পর্বের একটি পডকাস্ট সিরিজ ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে একটি ‘ভিত্তিহীন ও অপমানজনক প্রচারণা’ চালিয়েছেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আলোচনায় আসা ও তাদের সম্মানহানি করা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ক্যান্ডেস ওউন্স দম্পতির চেহারা, পারিবারিক সম্পর্ক, বৈবাহিক জীবন, অতীত ইতিহাস ও ব্যক্তিগত তথ্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গল্প বানিয়েছেন। এসবের জেরে ম্যাক্রোঁ দম্পতি বিশ্বজুড়ে অনলাইন হয়রানি ও বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
তিনবার আনুষ্ঠানিকভাবে মানহানিকর বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও ক্যান্ডেস তা উপেক্ষা করেছেন বলে দাবি করেছে ম্যাক্রোঁ দম্পতি। তাদের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা তাকে অনেকবার সুযোগ দিয়েছি সরে আসার জন্য, কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব মিথ্যাচার ছড়িয়ে গেছেন।’
মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নিজের পডকাস্টে ওউন্স দাবি করেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না, যদিও দুই পক্ষের আইনজীবীরা জানুয়ারি থেকেই যোগাযোগে রয়েছেন। তিনি এই মামলাকে ‘একটি মরিয়া জনসংযোগ কৌশল’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এতে অনেক তথ্যগত ভুল রয়েছে।
ওউন্সের এক মুখপাত্র বলেন, ‘এই মামলা মূলত ক্যান্ডেসকে ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে, বিশেষ করে তখন যখন ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ তার একাধিক সাক্ষাৎকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটি এক বিদেশি সরকার কর্তৃক একজন আমেরিকান নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।’
‘বিকামিং ব্রিজিত’ সিরিজটি ইউটিউবে ইতোমধ্যে ২৩ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এতে ‘যাচাইযোগ্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ দাবি ছড়ানো হয়েছে। যেমন—ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ একজন পুরুষ ছিলেন, তিনি পরিচয় গোপন করেছেন এবং স্বামী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ‘ইনসেস্টে’ জড়িয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, যখন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একজন স্কুলছাত্র ছিলেন, তখন ব্রিজিত ছিলেন তার শিক্ষিকা। তবে তাদের সম্পর্ক সর্বদা আইনের সীমার মধ্যেই ছিল।
এই গুজব প্রথম ছড়িয়ে পড়ে ২০২১ সালে, যা পরবর্তীতে টাকার কার্লসন ও জো রগানের জনপ্রিয় পডকাস্টে আলোচনায় আসে। উভয়েই ডানপন্থী দর্শকমহলে অত্যন্ত প্রভাবশালী।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সে দুই নারীর বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলায় জয়ী হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে একজন নিজেকে জ্যোতিষী হিসেবে দাবি করেন। তারা অনলাইনে তার লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে গুজব ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তবে চলতি মাসে ফরাসি আপিল আদালত সে রায় বাতিল করে দেয়। ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ এখন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মানহানি মামলার কঠোর মানদণ্ড
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি যদি মানহানির মামলা করতে চান, তাহলে তাকে ‘অ্যাকচুয়াল ম্যালিস’ প্রমাণ করতে হয়—অর্থাৎ বিবাদী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলেছিলেন বা সত্যতা যাচাই না করে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটেই মামলাটি একটি নজিরবিহীন আইনি লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে, যেখানে একজন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধান ও তার স্ত্রী মার্কিন একজন প্রভাবশালী অনলাইন ব্যক্তিত্বকে আইনের কাঠগড়ায় তুলেছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অতীতে একাধিক মানহানির মামলায় জড়িয়েছেন। তিনি সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করেন। এর আগে এক মানহানি মামলায় এবিসি নিউজের সঙ্গে তিনি ১৫ মিলিয়ন ডলারে একটি সমঝোতায় পৌঁছান।

Discussion about this post