বাংলাদেশ বুরো: শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘাত সংঘর্ষ প্রাণহানি এবং গৃহযুদ্ধের দিকে পতিত হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমদিকে এই আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকলেও এখন এ আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। একদিকে সরকারের অনড় অবস্থান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের অ-দায়িত্বশীল আচরণ এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট জন এবং সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ।
যেখানে এই আন্দোলন খুব সহজেই সমাধান করা যেত সেখানে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের মাধ্যমে ছাত্রদের আত্মসম্মানে আঘাত করে এবং অবহেলা করে এই আন্দোলনকে এত বড় আকারে নিয়ে আসার পেছনে প্রধান দায়ী সরকারের কতিপয় মন্ত্রী।
দলীয়ভাবে দমননীতি প্রয়োগ করে এই আন্দোলন কে প্রথমে দমাতে চেষ্টা করে সরকারের দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী এবং তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সাংঘর্ষিক পর্যায়ে নিয়ে যায় যেখানে এই আন্দোলনের সাথে ছাত্রলীগের সমর্থন ছিল।
সূত্রপাত এখান থেকেই শুরু.. এর মাধ্যমে সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এক পর্যায়ে তারা হল ছাড়া করে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে।
এরপরও সরকার এই তরুণ প্রজন্মের আবেগ এবং অনুভূতি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্রদের উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করতে বাধ্য করে। এবং সরকারের আরেক দায়িত্বশীল মন্ত্রী কঠোরভাবে দমন করার হুঁশিয়ারি দেয় এই ছাত্র সমাজকে। এর মধ্যে আন্দোলনে ঝরে যায় তরতাজা পাঁচটি প্রাণ যেটি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়। এরপরই মূলত এই ছাত্র আন্দোলন বিভীষিকাময় অগ্নিগর্ভে রূপান্তরিত হয়।
এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলে ছাত্র সমাজ ক্ষিপ্ত হয়ে সর্বাত্মক সাট ডাউন ঘোষণা করে। ছাত্রদের এই কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপকভাবে বল প্রয়োগ করে এবং প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে যেখানে এক দিনেই ঝরে যায় ২শ তরতাজা প্রাণ। এদিন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাতে আন্দোলন তো থামেনি বরং ছাত্রদের ব্লক রেড দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় আন্দোলনকে আরো বেগবান করে। এবং এই আন্দোলন নয় দফা দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়।
পরবর্তীতে আবারো আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছয় জন সমন্বয়কে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে জোরপূর্বক ভিডিও বার্তা আদায় করা হয়। এবং সাধারণ ছাত্রদের ব্যাপক হারে ধরপাকড় শুরু হয়। এতে আন্দোলনরত ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবির ডাক দেয়। যা এখন বাংলাদেশে চলমান। এই প্রতিবেদন লেখার দিন ৪ আগস্ট বাংলাদেশ আবারো সহিংস হয়ে ওঠে এবং ঝরে যায় আরো প্রায় একশত তরতাজা প্রাণ।
এদিন পূর্ব ঘোষিত প্রোগ্রাম কর্মসূচি অনুযায়ী সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নেয় এবং লাঠিসোঁটার পাশাপাশি তাদের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে। ছাত্রদের বিক্ষোভ আন্দোলনে দেশটিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, এদিন সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের ছয় জন ১৪ জন পুলিশ সদস্য সহ ৯৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। আন্দোলন আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় দেশটির বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসলীলা, বিভিন্ন নেতাদের বাসা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ গাড়ি ভাঙচুর আগুন দেওয়া। বিক্ষুব্ধ লোকজন কমপক্ষে ১৪টি স্থানে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন ও নিজস্ব কার্যালয় হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেন।
সর্বশেষ রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি এখনো সহিংসতা চালিয়ে যায়, আমরা কিন্তু গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি। শেখ হাসিনাকে ঠিক করতে হবে, এখনো সহিংসতা চালাবেন, রক্তপাত চালাবেন, নাকি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে পদত্যাগ করবেন।’
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতা যেকোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত। আজকে লাঠি তুলে নিয়েছি। যদি লাঠিতে কাজ না হয়, আমরা অস্ত্র তুলে নিতে প্রস্তুত।
জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রতিরোধ করুন, রুখে দাঁড়ান, সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশছাড়া করতে হবে। আমাদের এক দফা দাবি ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা বাকি। আমাদের যদি গুম–খুন করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়, যদি ঘোষণা দেওয়ার মতো কেউ না থাকে, আপনারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আর যদি আমার ভাইদের বুকে গুলি করা হয়, আমার বোনদের কেউ আহত হয়, আমরা বসে থাকব না। পাড়ায়–পাড়ায়, গ্রামে–গ্রামে, মহল্লায়–মহল্লায়, অলিতে–গলিতে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। যেখানেই হামলা হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আমরা এই সরকারকে মানি না। এখন থেকে দেশের নেতৃত্ব দেবে ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার ঘোষণা চূড়ান্ত ঘোষণা।’
বাংলাদেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দেশটির বিশিষ্ট একজন সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ইউএস বেঙ্গল কে বলেন, প্রথম থেকে এই আন্দোলন খুব সহজেই সমাধান করা যেত, এত প্রাণহানি হত না, আওয়ামী লীগের কিছু নেতৃত্বের ভুলে আজ এই আন্দোলন এভাবে এই পর্যন্ত পৌঁছেছে।
নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা দেশকে ভালোবাসে তারা ধ্বংসাত্মক কোন কাজের সাথে মোটেও সংযুক্ত নয় । কিন্তু তাদের আবেগকে মূল্যায়ন করা হয়নি প্রথম থেকেই দমন-পিড়নের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কারের মতো সিম্পিল একটা যৌক্তিক দাবিকে খুব সহজে সমাধান করা যেত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন এই আন্দোলন এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে ছাত্ররা আর সরকারের কাউকে বিশ্বাস করতে চাইছে না।
তিনি সমাধানের পথ হিসেবে বলেন, সরকারের এমন কোন বিশ্বস্ত মানুষকে দায়িত্ব দিতে হবে যার প্রতি ছাত্ররা আস্থা করতে পারবে এবং তাদের দাবি গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সংলাপের মাধ্যমে এ আন্দোলনের সমাধান করা যেতে পারে।

Discussion about this post