ডেস্ক রিপোর্ট: সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বেশ কয়েকটি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্রোহীরা শহরের অর্ধেকের বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের গাড়িতে করে শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি চ্যানেলে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের বাহিনী আলেপ্পো শহরে প্রবেশ শুরু করেছে।’
বিবিসি ওই ফুটেজকে আলেপ্পোর পশ্চিম উপশহর বলে শনাক্ত করেছে। বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা আলেপ্পোর মধ্যভাগে অবস্থিত মধ্যযুগীয় সিটাডেলের প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের একটি রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
বিবিসির যাচাই করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বড় একটি দল জিনিসপত্র হাতে নিয়ে আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকা থেকে সরে যাচ্ছে। এই স্থান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বিদ্রোহী বাহিনীর প্রবেশের দাবি করেছে এইচটিএস সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম।
সিরিয়ার সরকারপক্ষ জানিয়েছে, আলেপ্পো এবং ইদলিব প্রদেশের কয়েকটি শহরে অবস্থান পুনর্দখল করেছে তারা। ওই দুই প্রদেশে বুধবার এইচটিএস এবং তাদের মিত্রদের নেতৃত্বে আক্রমণ শুরু হয়েছিল।
এছাড়া তারা এখন আলেপ্পোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং বিদ্রোহীদের বিতাড়িত করছে।
সামরিক সূত্র জানিয়েছে, সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং আলেপ্পো বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এসওএইচআর আরও জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমান বাহিনী আলেপ্পো অঞ্চলে ২৩টি বিমান হামলা চালিয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্রোহী ও সরকারপন্থি বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘর্ষে ২৫৫ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
এটি সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর দ্বারা ২০১৬ সালে বিতাড়িত হওয়ার পর বিদ্রোহীরা প্রথমবারের মতো আলেপ্পোতে প্রবেশ করল।
২০১১ সালে সরকারবিরোধী গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযান চালানোর পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
সেসময় আসাদ সরকারের বিরোধিতাকারী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বিশাল অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তীতে রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় সিরিয়ার সরকার পুনরায় বেশিরভাগ অঞ্চল পুনর্দখল করে।
কিন্তু বুধবার এইচটিএস এবং তাদের মিত্ররা তাদের এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য সরকার ও মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু করার দাবি জানায়।
এটি এমন সময়ে ঘটল যখন সিরিয়ার সরকার ও তাদের মিত্ররা অন্য সংঘাতে ব্যস্ত। কারণ সিরিয়ার ভেতরে ইরান ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

Discussion about this post