ডেস্ক রিপোর্ট: ইউরোপের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের হাজারতম দিনে ইউক্রেনে শান্তি আলোচনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নতুন গতি পেয়েছে। শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের হঠাৎ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করার সিদ্ধান্ত দুই বছরের ন্যাটো নেতৃত্বাধীন ক্রেমলিন বিচ্ছিন্নতার নীতি ভেঙে দিয়েছে।
এটি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য এক হতাশাজনক ঘটনা। কারণ, এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, এটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। পুতিনের বিচ্ছিন্নতা দুর্বল করাটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
শলৎসের সঙ্গে ফোনালাপের পর জেলেনস্কি ইঙ্গিত দেন যে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হতে পারে। কারণ, এটি ট্রাম্পের একটি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। শলৎস জানান, পুতিনের কঠোর অবস্থান পরিবর্তন না হলেও ইউরোপের পক্ষে তার সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি, বিশেষ করে যখন ট্রাম্পও একই পথে হাঁটতে পারেন।
শলৎস-পুতিন ফোনালাপের এই পদক্ষেপ পশ্চিমা জোটে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে এক প্রকার শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। জার্মানির এই পদক্ষেপ ইউক্রেনের মিত্রদের ক্ষুব্ধ করেছে, বিশেষত ফ্রান্সের মতো দেশকে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের পক্ষে সোচ্চার। এদিকে, পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, পুতিনকে ফোন কল দিয়ে থামানো যাবে না। পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনই ইউক্রেনের জন্য একমাত্র উপায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জার্মানির এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। গবেষক আলেনা ইপিফানোভা জানান, জার্মানির আসন্ন নির্বাচনের আগে শলৎস নিজেকে শান্তিদূত হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এটি ইউক্রেনের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে।
একইসঙ্গে, ন্যাটো সদর দফতরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর কী ঘটতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এক ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, এখন কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই বিপজ্জনক। আমরা ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এখনও অস্পষ্ট। তার টিম ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুদ্ধের অবসানে একটি সমঝোতার দিকে যাওয়ার চেষ্টা হবে। তবে তার নীতি কৌশল এবং কর্মকর্তাদের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্পের সাবেক ইউক্রেন দূত কার্ট ভলকার বলেছেন, ট্রাম্প শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে পুতিনকে বুঝিয়ে দেবেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া লাভজনক নয়। এরপর সমঝোতার পথ খোঁজা হবে।
তবে ভলকার সতর্ক করেন, মস্কোর কূটনৈতিক ইতিহাস ইউক্রেনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তিনি বলেন, পুতিন কোনও চুক্তিতে আন্তরিক হবেন না। এমনকি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরবর্তী হামলার পরিকল্পনা করবেন।
মার্কিন প্রশাসন ও ইউরোপের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের বার্তা দিলেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পশ্চিমা কূটনীতিকরা মনে করেন, আলোচনায় রাশিয়া কতটা ছাড় দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। একজন ফরাসি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যদি যুদ্ধবিরতি হয়, তবে কী সত্যিই শান্তি স্থায়ী হবে? নাকি আমরা আবারও সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখব?
খবর: সিএনএন

Discussion about this post