ডেস্ক রিপোর্ট: একদিকে কমলা হ্যারিস; যিনি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প; যিনি পুতিনের কাছের বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
আর এই দুজনের দিকে এখন তাকিয়ে আছে বিশ্ব।তাদের দুজনেরই রয়েছে নিজস্ব কৌশল এবং শক্তিমত্তা।
চলুন এই দুজনের উঠে আসা এবং শক্তিমত্তা সম্পর্কে জেনে আসা যাক।

কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাঁর মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন ক্যানসার গবেষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিসের জন্ম জ্যামাইকায়। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
খুব কম বয়সেই কমলার মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিলো।ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ কমলা হ্যারিস হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
প্রথমে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হেস্টিংস কলেজ অব দ্য ল’ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
তার কর্মজীবন শুরু হয় আলমেদা কাউন্টি অ্যাটর্নি অফিসে। পরে তিনি সান ফ্রান্সিসকো ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে এবং পরে সান ফ্রান্সিসকোর সিটি অ্যাটর্নি অফিসে নিয়োগ পান।
২০০৩ সালে তিনি প্রথমবার নির্বাচনে জেতার মধ্য দিয়ে সানফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন।কমলা হ্যারিস ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
এরপর ২০১৭-২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও অ্যাটর্নি জেনারেল থাকার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমালোচক ছিলেন তিনি।দুই বছরের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করার সময় হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির উঠতি তারকা হিসেবে সম্মান অর্জন করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাইক পেন্সকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন কমলা হ্যারিস। কর্মজীবনে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস। ২০০৫ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ২০ জন নারীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নিউজ উইক। একই বছর তাকে থারগুড মার্শাল অ্যাওয়ার্ড দেয় ন্যাশনাল ব্ল্যাক প্রসিকিউটরস অ্যাসোসিয়েশন।
এছাড়াও ২০১৩, ২০ ও ২১ সালে তিনি টাইম হানড্রেডে অন্তর্ভূক্ত হন।
আর ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে যৌথভাবে টাইম পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন কমলা হ্যারিস।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে শামিল হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিলিয়নিয়ার। নিউ ইয়র্কের এই রিয়েল এস্টেট টাইকুনের বর্ণাঢ্য জীবন কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন টেলিভিশনের পর্দায় ফুটে উঠেছে।
এর আগের নির্বাচনে হেরে ৭৮ বছরের এই রিপাবলিকান আবারও সমস্ত ‘প্রতিকূলতা’ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চাইছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট টাইকুন ফ্রেড ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান।
স্কুল জীবনে খারাপ আচরণ থেকেই আজকের ট্রাম্প হওয়ার যাত্রা শুরু। স্কুলে খারাপ আচরণ করায় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাকে ‘নিউ ইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমি’তে পাঠানো হয়। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুল থেকে তিনি ডিগ্রি অর্জন করেন।

একসময় ভাগ্য সহায় হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার বড় ভাই ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়র পাইলট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বাবার অনুগ্রহে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি।ডিগ্রি অর্জনের পরই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট বানানো হয় তাকে। কোম্পানির পরিবর্তন করে রাখেন ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’।১৯৯৯ সালে তাকে হারান ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাদকাসক্তির কারণে ফ্রেড ট্রাম্পের মৃত্যু হয় ৪৩ বছর বয়সে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই কারণেই সারাজীবন মদ এবং সিগারেট এড়িয়ে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন বরাবরই ব্যাপকভাবে প্রচারের আলোয় থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও হয়ে উঠেছে।
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা জেলনিকোভা।তিনি একজন চেক ক্রীড়াবিদ এবং মডেল ছিলেন। তাদের তিন সন্তান ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা এবং এরিক।১৯৯০ সালে এই যুগলের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
তার দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস।এই যুগলের একমাত্র সন্তান টিফানির জন্মের দুই মাস পর ১৯৯৩ সালে মার্লা ম্যাপলস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন।১৯৯৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
ট্রাম্পের বর্তমান স্ত্রী হলেন সাবেক স্লোভেনিয়ান মডেল মেলানিয়া ট্রাম্প।তারা ২০০৫ সালে বিয়ে করেছিলেন। তাদের ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামে এক পুত্রও আছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিতর্কিত অধ্যায় রয়েছে।একাধিকবার যৌন নির্যাতন ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
৮০-র দশকের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট দলের মনোনয়ন জেতার দৌড়ের বিষয়ে ট্রাম্প মনোনিবেশ করেন।২০০০ সালে প্রথমে রিফর্ম পার্টির হয়ে এবং ২০১২ সালে রিপাবলিকান হিসেবে তিনি প্রার্থী হওয়ার লড়াই চালান।
তবে তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন ২০১৬ সালে।আর এই নির্বাচনে তিনি হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প।
প্রথম মেয়াদের পর ২০২০ সালে আবার নির্বাচনে দাঁড়ান ট্রাম্প।তবে তিনি এবার জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন।আর এবার ২৪ এর নির্বাচনে আবার প্রেসিডেন্ট হতে মাঠে নেমেছেন তিনি।
এখন প্রশ্ন এই দুজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মাঝে পার্থক্য কোন জায়গাগুলোতে..
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়লাভ করলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউসের বর্তমানে অনুসৃত নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির খুব একটা পরিবর্তন না-ও হতে পারে।
বাইডেনের নীতির ধারাবাহিকতাই অক্ষুণ রাখবেন কমলা হ্যারিস।তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে, যদি তার বদলে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্পের এবারের প্রেসিডেন্সিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিগত কয়েক দশকের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটাই প্রমাণিত।

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এতদিন ধরে গুরুত্ব পেয়ে আসা ‘বৈশ্বিক নীতি’র বদলে তিনি গ্রহণ করতে পারেন ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতি।
ট্রাম্পের এই নীতির অর্থ হচ্ছে যেখানে আমেরিকার স্বার্থ নেই, কিংবা তার স্বার্থ বিঘ্নিত হবে, এ রকম ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে মিত্রদের স্বার্থকেও গুরুত্ব দিবেন না ট্রাম্প। আর ট্রাম্পের এই অবস্থানেই মূলত শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ গুলো
আর এদিকে কমলা হ্যারিস নিজের প্রস্তাবিত অর্থনীতির রূপরেখাকে বলেছেন ‘অপরচুনিটি ইকোনমিক্স’ বা ‘সুযোগের অর্থনীতি’।সেখানে মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধের কথা আছে, আছে ওষুধের দামের ঊর্ধ্বসীমার কথা, গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধাদায়ী ব্যবসাকে সাশ্রয় দেওয়ার কথা।আর আছে অতিধনীদের কর বাড়ানোর দুঃসাহসী প্রস্তাব।
এছাড়াও বৈশ্বিক শান্তির দিকে তিনি কথা বলছেন বারবার। অবশ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের পথেই হাটবেন। তার নীতিই অনুসরণ করে চলবেন।

Discussion about this post