বাংলাদেশ বুরো: বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আবারো সহিংস হয়ে উঠছে আন্দোলন। শুক্রবার রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত পাঁচ জেলায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, সংঘাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন শ্রমিক ও পুলিশের একজন সদস্য। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৭০ জন।
রাজধানীর উত্তরায় গণমিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারও কারও হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে সিলেট ও খুলনায়। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় এক যুবককে অস্ত্র হাতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে ১৬ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২১৩ জন। গতকাল আরও দুজন নিহত হলেন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ২১৫ জনের।
বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল অন্তত ২৮ জেলায় এই কর্মসূচি পালনে ব্যপক সংঘর্ষ-সংঘাতের খবর পাওয়া যায়।
এদিন ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য সকল পদবির মানুষেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ এই গণমিছিলে যোগ দেন। শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষের হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয় মিছিলে। মিছিলকারীদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘চলমান পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য সকল পদবির আহ্বান’।
উল্লেখ্য, মিরপুর ডিওএইচএসে মূলত সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা বসবাস করেন। গণমিছিল ও সমাবেশে বিপুলসংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ছাড়াও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক নারী সদস্যকে মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। মিছিলে হত্যার বিচার চেয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। স্লোগানের মধ্যে রয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমরা কে আমরা কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’; ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা !
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৩ আগষ্ট শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও পরদিন রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা।
‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে ফেসবুকে লাইভে এসে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইএসওএল) বিভাগের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই সময়ে আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তাঁর ফেসবুকে এই কর্মসূচির কথা নিশ্চিত করেন।
আবদুল হান্নান আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট ঘোষণা করছি যে আগামীকাল (শনিবার) সারা দেশে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, প্রতিটি জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন পালিত হবে।’ তিনি বলেন, এই সরকারকে কোনো কর দেওয়া হবে না, বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল দেওয়া হবে না, সচিবালয় ও সরকারি-বেসরকারি সব কার্যালয় বন্ধ থাকবে, গণভবন-বঙ্গভবনে কোনো গাড়ি ঢুকবে না। এই সরকারকে সর্বাত্মক অসহযোগিতা করা হবে। এই সরকার যেন আর না থাকতে পারে, সে জন্য সবাইকে এসব কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।

Discussion about this post