ডেস্ক রিপোর্ট: ফ্রান্সের করাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থি লেবানিজ শিক্ষক জর্জেস আবদাল্লা। ৭৪ বছর বয়সি আবদাল্লা দীর্ঘ ৪১ বছর কারাভোগ করেছেন। খবর বিবিসি’র।
আবদাল্লা শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সরাসরি বেইরুত যাওয়ার জন্য বিমানে ওঠার কথা ছিল। তার আইনজীবী জানান, ‘তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় জেলে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। ‘
১৯৮৭ সালে ফ্রান্সে একজন আমেরিকান ও একজন ইসরাইলি কূটনীতিক হত্যা মামলায় আবদাল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে বামপন্থি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে তার মুক্তি এখনও তাৎপর্যপূর্ণ। এই আন্দোলনের সঙ্গে তিনি আজও যুক্ত রয়েছেন।
তার সাদা দাড়ি ও দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বামপন্থী বিক্ষোভের ব্যানারে দেখা যায়। প্রতিবছর একবার প্রতিবাদকারীরা তার মুক্তির দাবিতে পাইরেনিজ পাহাড়ের কারাগারের সামনে জমায়েত হতেন। ফ্রান্সের তিনটি বামপন্থী নেতৃত্বাধীন পৌরসভা তাকে ‘সম্মানজনক নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
যদিও ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি জামিনের জন্য আবেদন করতে পারতেন, কিন্তু তার সব আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। সমর্থকরা মনে করেন, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ফ্রান্সের ওপর চাপ কাজ করেছে।
ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, লানেমাজান কারাগারের সেলে বসে আবদাল্লা বলেন, ‘আমি ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতি মনোযোগ দিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পেরেছি। যদি সেটা না থাকতো, তাহলে ৪০ বছরের কারাভোগ মস্তিষ্ক নষ্ট করে দিতে পারত।’
জর্জেস আবদাল্লা কে?
জর্জেস আবদাল্লা ১৯৫১ সালে উত্তর লেবাননের এক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে তিনি লেবানিজ আর্মড রেভোলিউশনারি ফ্যাকশনস (এলএআরএফ) গঠনে সাহায্য করেন—একটি ছোট মার্কসবাদী দল, যারা ইসরাইল ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করত।
সেই সময় লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল। ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননে আগ্রাসন চালায়, যেখানে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন।
আবদাল্লার দল ইউরোপে ইসরাইল ও মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং ফ্রান্সে পাঁচটি হামলা চালায়। ১৯৮২ সালে দলটির সদস্যরা স্ট্রাসবুর্গে মার্কিন কূটনীতিক চার্লস রে এবং প্যারিসে ইসরাইলি কূটনীতিক ইয়াকভ বারসিমানতোভকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া এলএআরএফের দায়ে একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে দুই ফরাসি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞ নিহত হন।
আবদাল্লাকে ১৯৮৪ সালে লিয়নে গ্রেফতার করা হয়। ফরাসি গোয়েন্দারা তাকে অনুসরণ করছিলেন, আর তিনি ভেবেছিলেন হত্যাকারীরা তাকে অনুসরণ করছে। তাই তিনি নিজে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। প্রথমে তার বিরুদ্ধে শুধু ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার এবং অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

Discussion about this post