ডেস্ক রিপোর্ট: চিকিৎসা নিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। এর মধ্যেই হামলা চালাল দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারাল ১০ শিশুসহ অন্তত ১৫ জন। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে সেন্ট্রাল গাজায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। একই দিনে উপত্যকাটিতে ইসরাইলি হামলায় মোট ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, যখন মধ্যস্থতাকারীরা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি থাকার কথা বলছে ঠিক তখনই ইসরাইল বোমা হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে দেইর আল-বালা মেডিকেল পয়েন্টে এ হামলা চালানো হয়েছে। ওই সময় পয়েন্টের সামনে থাকা ফিলিস্তিনিরা পুষ্টি সামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
দেইর আল-বালা ক্লিনিক পরিচালনাকারী সংস্থা ‘প্রজেক্ট হোপ’ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রাবিহ তোরবে বলেন, ‘আজ সকালে নিরীহ পরিবারগুলোকে নির্মম হামলার শিকার হতে হয়েছে। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনী বলছে, তারা হামাসের সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যারা কি না ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত ছিল। হামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ক্ষতি বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা। বলছে, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
মেডিকেল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা ৩৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ আবু উহদা বলেন, ‘আমাদের ভুলটা কোথায়? আমাদের সন্তানদের ভুল কোথায়? হামলার পর আমি দেখতে পাই, এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে রেখেছে। তারা দুজনেই মাটিতে পড়ে ছিল। এ হামলায় তারা আমার সামনেই প্রাণ হারাল।’
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান ও বন্দুক হামলায় গাজা উপত্যকায় ৬৭ জন মারা গেছে।
গত বুধবার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে সায় দেয়। যুদ্ধবিরতির জন্য তারা ১০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলে। তাদের এ প্রতিক্রিয়ায় বেশ খুশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। এ সপ্তাহ বা আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা চুক্তিতে যেতে পারবো।’
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করা কাতার বলছে, চুক্তি হতে সময় লাগতে পারে কারণ এখনও কয়েকটি জটিলতা রয়ে গেছে। ইসরাইল চাইছে, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি। অন্যদিকে হামাস চাইছে পুনরায় হামলা শুরু না করার নিশ্চয়তা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যদি দুই পক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হয় তাহলে ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরাইলের শর্তাবলী পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মধ্যে রয়েছে হামাসের অস্ত্র ত্যাগ।
সবশেষ যুদ্ধবিরতিটি গত মার্চে ভঙ্গ করে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগেই হামলা শুরু করে দখলদাররা। ইসরাইল হামাসের সম্পূর্ণ অস্ত্র ত্যাগ এবং গাজা থেকে সরে যাওয়ার দাবি করেছে। তবে, স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয়রা জানিয়েছে, খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকা শিবিরের দিকে ইসরাইলি ট্যাংক ও বুলডোজার এগিয়ে আসছে। ইসরাইলি সৈন্যরা গুলি চালাচ্ছে এবং শিবিরে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে। এ হামলার মধ্যে মানুষ পালাতে শুরু করেছে তাদের সর্বস্ব নিয়ে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কার্যকর হাসপাতাল নাসের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আহতদের বড়সড় ঢল নেমেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীদের একজনের পাঠানো একটি ছবিতে দেখা গেছে, হাসপাতালের আশপাশের তাঁবু শিবিরগুলোর ধারে ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান করছে।

Discussion about this post