গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘প্রবল চাপের’ মুখে ইসরাইল

ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় কৌশলগত চুক্তির দিকে এগোতে চাইছেন। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে। তবে এই পথে গাজা যুদ্ধ এখন প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যে কারণে গাজায় চলমান আগ্রাসন বন্ধে এবং হামাসের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে দখলদার ইসরাইলের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ, জেরুজালেম পোস্ট, ইসরাইল হায়োম ও ইরানি গণমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোয়াইট হাউস তেলআবিবকে সতর্ক করে বলেছে, যদি তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে তাকে একাই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

ট্রাম্পের আসন্ন সফর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন। তার এই সফরের প্রাক্কালে গাজায় যুদ্ধবিরতির ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ আরও বেড়েছে।

একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা ইসরাইলি মন্ত্রিসভাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি তারা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির বিরোধিতা অব্যাহত রাখে, তাহলে তার জন্য ‘বড় ধরনের মূল্য’ দিতে হবে।

জেরুজালেম পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যতদিন যুদ্ধ শেষ না হচ্ছে, ততদিন শুধু জিম্মিরাই এর মূল্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন থেকে ইসরাইলকেও সেই মূল্য দিতে হবে’।

ইসরাইলকে ছাড়াও চুক্তি সম্ভব

পরিচয় প্রকাশ না করা ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি বৃহৎ আঞ্চলিক চুক্তি ইসরাইলকে বাদ দিয়েও করা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হলো কেবল শুরু। এতেও যদি ইসরাইলের ঘুম না ভাঙে, তাহলে ইসরাইলকে ছাড়াই ‘মিলেনিয়ামের চুক্তি’ বাস্তবায়ন হবে’।

ট্রাম্প এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ বন্ধ করবে। তবে আনসারুল্লাহ (হুথি) নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেন সরকার জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি কেবল লোহিত সাগর ও বাব আল-মানদাব প্রণালী এলাকায় পারস্পরিক হামলা বন্ধের উদ্দেশ্যে কার্যকর থাকবে। এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের অভিযানকে প্রভাবিত করবে না।

নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের অসন্তোষ

এদিকে ইসরাইল হায়োম সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ‘ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন’। সেই সঙ্গে তিনি পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন উদ্যোগ এখন আর থামিয়ে রাখবেন না।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলের একটি সামরিক রেডিও।

ইসরাইলি আর্মি রেডিওর সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ইসরাইলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা জানিয়েছেন—ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে, নেতানিয়াহু তার সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ গাজা পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা সম্পর্কিত ইসরাইলের ঘোষণাও সৌদির পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত।

এসব নিয়েই মূলত যুক্তরাষ্ট্র এখন গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের ওপর কৌশলগত ও কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সৌদি–মার্কিন চুক্তি থেকে বাদ পড়তে পারে ইসরাইল।

এদিকে, গাজায় চালানো অব্যাহত হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যা নিয়ে এ পর্যন্ত ৫২,৭৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১৯,৩৪৯ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজা তথ্য অফিসের মতে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৬২ হাজারেরও বেশি।

 প্রিন্ট করুন