ডেস্ক রিপোর্ট: ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর আধুনিক শিল্পকলা জাদুঘরে জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা দারিদ্র্য ও যুদ্ধ মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই স্বীকার করলেন—এটিই সম্ভবত তার শেষ আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন।
সোমবার বাইডেন বলেছেন, এটাই আমার শেষ জি২০ সম্মেলন। আমরা একসঙ্গে অনেক অগ্রগতি করেছি, তবে আমি আপনাদের অনুরোধ করব এগিয়ে যেতে—আপনারা অবশ্যই তা করবেন, আমার অনুরোধ থাকুক বা না থাকুক।
এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্মত ছিলেন নেতারা। ব্রাজিলে দুই দিনের এই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যেন বাইডেনকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর আইকনিক সুগারলোফ পর্বতের পটভূমিতে বিশ্বনেতারা সম্মেলন শেষে একটি দলীয় ছবি তোলার জন্য জড়ো হন। তবে তখনও বাইডেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলছিলেন।
যখন বাইডেন ফটো প্ল্যাটফর্মে পৌঁছান, ততক্ষণে অন্য নেতারা জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। ফলাফল—প্রথাগত ‘ফ্যামিলি ফটো’তে বাইডেনের অনুপস্থিতি। হোয়াইট হাউজ এই ঘটনাকে ‘লজিস্টিক সমস্যা’ বলে উল্লেখ করলেও এটি বাইডেনের সফরে দেরির একটি ধারাবাহিক উদাহরণ।
লাতিন আমেরিকা সফরের প্রথম ধাপে পেরুর লিমায় এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সম্মেলনে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। একটি মঞ্চে নেতারা পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করছিলেন বাইডেনের জন্য। শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের নেতাদের পাশে একটি কোণে জায়গা নিয়ে বাইডেন মঞ্চে যোগ দেন।
এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ছিলেন মঞ্চের কেন্দ্রে, আয়োজক পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তের পাশে। অতিথি নেতাদের অবস্থান দেশের নামের বর্ণানুক্রমিক ক্রমে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাইডেন-শি বৈঠক: প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও স্মৃতিচারণা
পেরুর একটি হোটেলে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক ছিল সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এখানে উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে আলোচনার সময় বাইডেন বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে’।
একপর্যায়ে শি তাকে ইয়ারপিস পরার পরামর্শ দিলে বাইডেন রসিকতা করে বলেন, আমি চীনা শিখে ফেলেছি।
বৈঠকের শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ পরিচয় ও কাজের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানান, তারা সরাসরি কথা বলার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
আমাজনের একটি শহরে বাইডেন। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমসআমাজনের একটি শহরে বাইডেন। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
আমাজনে পরিবেশ সুরক্ষার আহ্বান
পরদিন ব্রাজিলিয়ান আমাজনের মানাউসে পৌঁছে বাইডেন স্থানীয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর বনের অভ্যন্তরে হাঁটাহাঁটি শেষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার গুরুত্ব নিয়ে ভাষণ দেন।
তিনি বলেন, কেউই পরিবেশ রক্ষা থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। এই বিপ্লব থামানো সম্ভব নয়।
শেষ দিনের প্রতিশ্রুতি
সম্মেলনের শেষ দিনে পরিবেশ বিষয়ক আরও এক বৈঠকে বাইডেন নেতাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন।
৮২ বছরে পা রাখতে যাওয়া বাইডেন বলেন, ইতিহাস আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আপনাদের বিশ্বাস রাখতে বলব এবং এগিয়ে যেতে বলব।
শেষে, নিজেকে সংযত করে তিনি বলেন, আমার বলার আরও অনেক কিছু আছে, তবে আর কিছু বলব না।
খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস