ডেস্ক রিপোর্ট: লেবাননে নতুন এক বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৩০০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নতুন বিস্ফোরণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই বিস্ফোরণগুলো হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী দ্বারা যোগাযোগে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। এর একদিন আগেই লেবাননের বিভিন্ন স্থানে হিজবুল্লাহর হাজারো পেজার বিস্ফোরিত হয়েছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার লেবাননের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, বৈরুতের পূর্ব ও দক্ষিণাংশে, বিশেষ করে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে পেজার ও অন্যান্য যন্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছে। পূর্ব বেকা উপত্যকায় তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছিল।
ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ পরিচালিত আল-মানার টিভি জানায়, লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। তারা দাবি করে, এই বিস্ফোরণগুলো ওয়াকিটকি ডিভাইসের বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে।
দক্ষিণ লেবাননের টাইরে এলাকা থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক আলী হাশেম জানান, তার সামনে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। তাদের পেছনে থাকা একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয়েছে। একই সময়ে কাছাকাছি আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এখন রাস্তায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স এবং সর্বত্র বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে।
হাশেম আরও বলেন, মঙ্গলবারের মতোই বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ একসঙ্গে ঘটেছে। তবে এবার মূলত ওয়াকিটকি এবং রেডিওর বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিছু গাড়ির সৌরবিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র ও ব্যাটারিও বিস্ফোরিত হয়েছে। বৈরুতের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির সৌরবিদ্যুৎ সরঞ্জাম বিস্ফোরিত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়ে এলাকায় এক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে বলে আল-জাজিরার ইমরান খান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এলাকায় প্রচুর অ্যাম্বুলেন্স চলাচল লক্ষ্য করছি, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, বিস্ফোরণের ফলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হিজবুল্লাহর পেজার বিস্ফোরণের পরদিনেই এই নতুন বিস্ফোরণগুলো ঘটলো। মঙ্গরবারের বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত ও ২হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছিলেন। হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকার হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
এই বিস্ফোরণগুলোর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তাক্ত আহত ব্যক্তিদের উপস্থিতি বাড়ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সব মেডিক্যাল কর্মীদের কাজে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, পরিস্থিতির আরও অবনতি না ঘটে সেজন্য মহাসচিব সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ২০০৬ সালের ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল এই প্রস্তাব।
মঙ্গল ও বুধবারের বিস্ফোরণগুলো ইসরায়েলের যুদ্ধ সম্প্রসারণের লক্ষ্য ঘোষণার পরপরই ঘটে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা উত্তর সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের পুনর্বাসনের জন্য যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল পরিবর্তন করছে।
এদিকে, গাজায় হামাসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ প্রতিদিন ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, লেবাননের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর সময় ফুরিয়ে আসছে।

Discussion about this post