Print Date & Time : 9 May 2025 Friday 12:45 am

লড়াই হবে সমানে সমান

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারত রাতের আঁধারে পাকিস্তানে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। যার কিছু আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে পাঞ্জাবে গিয়ে পড়েছে। পাকিস্তানও পালটা হামলা চালিয়েছে বিমানবাহিনী দিয়ে এবং দূরপাল্লার কামানের গোলা ছুড়ে। ইতোমধ্যে বিশ্ব মিডিয়ায় খবর এসেছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর অত্যাধুনিক ৪.৫+ জেনারেশন ফরাসি বিমান রাফাল বিধ্বস্ত হয়েছে। যদিও পাকিস্তান এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে কোনো হামলা চালায়নি এবং সংঘাত-সংঘর্ষ কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারপরও যে কোনো মুহূর্তে একটি বড় আকারের পরিপূর্ণ যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হয়তো সেই যুদ্ধ সপ্তাহব্যাপী সীমিত সময়ের জন্য হতে পারে। তবে এরকম একটি যুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ হবে অসীম ও কল্পনাতীত।

স্বাভাবিক সমীকরণে বলা হয়, ভারতের সশস্ত্রবাহিনী আকারে বড় এবং তাদের সমরাস্ত্রের সংখ্যা বেশি। তাই তুলনামূলকভাবে ছোট দেশ পাকিস্তানের পক্ষে সমানে সমান লড়া সম্ভব নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী দ্বিতীয় মত রয়েছে। ভারতের চেয়ে আকারে পাকিস্তান প্রায় চারগুণ ছোট। জনসংখ্যা বিচারে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছয়গুণ কম। এ হিসাবে ভারতের সেনাবাহিনীর সংখ্যা ১০ লাখ হলে পাকিস্তানের দুই লাখের মতো হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে পাকিস্তানের সেনাসংখ্যা ৬ লাখ, যা ভারতের অর্ধেকের চেয়ে বেশি। বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে শক্তির অনুপাত হলো পাকিস্তান ১, ভারত ১ দশমিক ৫। পারমাণবিক বোমার সংখ্যায় ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের সংখ্যা বেশি।

এর বাইরে ভারতের সশস্ত্রবাহিনী শুধু পাকিস্তানের সীমানায় মোতায়েন নেই। তাদের প্রায় সাড়ে চার লাখ সৈন্য কাশ্মীরে। বাংলাদেশের তিনদিকে প্রায় দুই লাখ। বাকি সৈন্য চীন সীমান্তে ও নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুরসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদ আক্রান্ত এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রেও চীন ও বাংলাদেশের আশপাশের ঘাঁটিগুলো থেকে যুদ্ধবিমান প্রত্যাহার করে সব একসঙ্গে পাকিস্তান সীমান্তে নিয়ে যাওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।

এসব বিবেচনায় পাকিস্তান সীমান্তে ভারত যে পরিমাণ সেনা ও বিমান মোতায়েন করতে পারবে, তাতে ব্যালান্স অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ভারসাম্যে খুব একটা তারতম্য হবে না। বলতে গেলে এ পর্যন্ত পাকিস্তান এই ভারসাম্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যদিও আফগানিস্তান থেকে আসা ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অত্যাচারে পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান অস্থির। এমনকি গত ৬ মে টিটিপি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাকিস্তানের সাতজন সৈন্য হত্যা করেছে। কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানকে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্যকে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা মোকাবিলায় রাউন্ড দ্য ক্লক মোতায়েন রাখতে হচ্ছে। এটা পাকিস্তানের জন্য একটা বড় মাথাব্যথা।

সৈন্য ও বিমান সংখ্যায় সাম্যতার প্রসঙ্গের বাইরে পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ভরসার বিষয় হলো চীনসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের তাৎক্ষণিক সমর্থন। ইতোমধ্যে তুরস্ক মিসাইল, ড্রোনসহ বেশকিছু সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে পাঠিয়েছে। তাদের একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ করাচিতেও অবস্থান নিয়েছে। চীন পাঠিয়েছে বিমানবিধ্বংসী বিভিআর-বিওন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের পিএল-১৫ মিসাইল, যা ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সমরাস্ত্র ও লজিস্টিকস তো রয়েছেই। ভারত হামলা করার পর ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজানও তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তারা প্রয়োজনে লজিস্টিকস দিয়ে পাকিস্তানকে সহায়তা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগের সম্পর্ক বিবেচনা করে ভারত যে সহায়তা বা সমর্থনের আশা করেছিল, সেক্ষেত্রেও খুব একটা এগোতে পারেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলে দিয়েছেন, পহেলগাঁওয়ের হামলায় পাকিস্তানের হামলার কোনো প্রমাণ ভারত হাজির করতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৭ মে ভারতের হামলাকে বলেছেন ‘লজ্জাজনক’। আর চাইলেই এখন কোনো সমরাস্ত্র এনে লাভ নেই। প্রশিক্ষণ ও কার্যকরভাবে তা ব্যবহার করা এই সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়।

অন্যদিকে ভারতের বেশির ভাগ সমরাস্ত্র হলো রাশিয়ার। বর্তমানে রাশিয়ার নিজের অবস্থাই ততটা ভালো না। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে হাজার হাজার ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান হারানোর পর এখন ইরানের মতো দেশ থেকে তাদের কামানের গোলা, ড্রোন, মিসাইল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাশিয়া ভারতের কাছে থাকা রাশিয়ান ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, কামানের জন্য কতটা খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অবশ্য তারপরও রাশিয়া ভারতকে কিছু মিসাইল দিয়েছে, যা বেশ কার্যকর।

ভারতকে ইসরাইলের সহায়তার বিষয়টিও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত নয়। বর্তমানে ইসরাইল কয়েকটি রণাঙ্গনে নিজেই ব্যস্ত ও মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। আগে হেরন ড্রোনসহ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের যে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম তারা ভারতে দিয়েছিল, সেগুলো অবশ্য এখন বেশ ভালোভাবেই ভারত কাজে লাগাতে পারবে। ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ খাতে তারা চলমান পরিস্থিতিতে তাদের সব রাজনৈতিক দল একাট্টা হয়েছে। ভারতের মিডিয়াও অত্যন্ত শক্তিশালী। পক্ষান্তরে পাকিস্তান এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।

যাহোক, পরিস্থিতি আজ বা কালের মধ্যেই থেমে থাকবে না। প্রতিমুহূর্তে পালটাবে। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে সবদিক থেকে। হাতি ও চিতা বাঘের মধ্যে যুদ্ধটা কতদূর যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।