ডেস্ক রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) দীর্ঘ ৯ মাস আটক থেকে গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হন দুই মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস।
মহাকাশে টানা ২৮৬ দিনে সুনীতা ও বুচের শরীর এক রকম ভুলতেই বসেছিল পৃথিবীর আকর্ষণের প্রভাব। যার ফলে আপাতত পৃথিবীর পরিবেশ এবং প্রায় ভুলে যাওয়া মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবের সঙ্গে শরীরকে সইয়ে নেওয়ার কাজটাই শুরু করেছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। ৪৫ দিন ধরে প্রতিদিন দু’ঘণ্টা করে তাদের নিয়ে চলবে বিশেষ রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম। গোটা গ্রোগ্রামটি ফেজ–ওয়ান, টু এবং থ্রি–তে ভাগ করেছে নাসা।
দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসের পরে তাদের শরীর যাতে দ্রুত আবার পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তার জন্যেই নাসার অ্যাস্ট্রোনট স্ট্রেংথ, কন্ডিশনিং অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (এএসসিআর) টিম তৈরি রেখেছে ‘রি–কন্ডিশনিং ক্যাম্প’। এখানেই শুরু হয়েছে বুচ–সুনীতাকে ফের পৃথিবীতে থাকার উপযুক্ত করে তোলার কাজ।
নাসা জানাচ্ছে, তাদের এএসসিআর টিমে রয়েছেন সর্বোচ্চ মানের অ্যাথলিট ট্রেনার, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট এবং কন্ডিশনাল এক্সপার্টরা।
বুধবার বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ভোর ৩.৫৭–এ মেক্সিকো উপসাগরে ক্রু–নাইন–এর স্্প্ল্যাশডাউন হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নাসার রিকভারি টিম সেই ক্রু–মডিউল থেকে বার করে আনে সুনীতা, বুচ–সহ চার জনকে। তার পরেই তাদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে।
বুধবার থেকেই তাদের ‘স্বাভাবিক’ করে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ২৮৬ দিন আগে যেমন ছিল, সেই অবস্থায় সুনীতা ও বুচের শরীরকে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলবে তিন দফায়। প্রথম দফা বা ফেজ–ওয়ানে রাখা হয়েছে পেশিগুলোকে শক্তিশালী করা, শরীরকে আগের মতো নমনীয় করে তোলা এবং দীর্ঘ অনভ্যাসের জড়তা কাটিয়ে দুই মহাকাশচারীকে স্বাভাবিকভাবে হাঁটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ।
ফেজ–টু–তে থাকছে প্রধানত কার্ডিয়োভাস্কুলার কন্ডিশনিং অর্থাৎ হৃদপিণ্ডকে নতুন করে পৃথিবীর পরিবেশের মানানসই করে তোলা। মহাকাশে দীর্ঘ বসবাসের কারণে তাদের হৃদপিণ্ড এতদিন ‘অবাধে’ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত পাঠিয়েছে। কিন্তু এবার — ফিরে আসার পরে পৃথিবীর আকর্ষণ শরীরের ওপরে কাজ করতে শুরু করেছে। তাই চাপ বেড়েছে হৃদপিণ্ডের উপরেও। এই ফেজে থাকবে শরীরের সংবেদনশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও।
ফেজ–থ্রি–র জন্য সবচেয়ে বেশি সময় রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে নাসার সূত্রে। এই পর্যায়ে থাকছে ফাংশনাল ডেভলপমেন্ট বা শরীরের কার্যকরী উন্নয়ন।
নাসার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য ধাপে ধাপে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ–প্রত্যঙ্গকে স্বাভাবিক করে তোলা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে জানিয়েছেন, এই পর্যায়টি কোনো নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে না। প্রত্যেকের শরীরের গঠন অন্যের চেয়ে আলাদা। তাই যার যেমন উন্নতির হার, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।
২৮৬ দিন মহাকাশে কাটানোর সময়ে সুনীতা ও বুচ চার হাজার ৫৭৬ বার পৃথিবীর চারদিকে পাক খেয়েছেন। অতিক্রম করেছেন ১৯ কোটি ৫২ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি পথ। এই দূরত্ব পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহের দূরত্বের কাছাকাছি। শরীরের ওপর এত অত্যাচার — পুরোপুরি সেরে উঠতে ৪৫ দিন বোধহয় কিছুই নয়।

Discussion about this post