ডেস্ক রিপোর্ট: আলোচিত রাফাল ও জে-১০সি—আধুনিক যুগের দুটি চতুর্থ-সাড়ে-চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। তবে গত ৭ মে, এক ভারতীয় বিমান বাহিনীর সঙ্গে ঐতিহাসিক সংঘর্ষে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) চীনা নির্মিত জে-১০সি ফাইটার বাস্তব যুদ্ধে প্রথমবারের মতো একটি ফরাসি রাফালকে ভূপাতিত করে।
এই ঘটনাটি শুধু একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংস নয়, বরং বর্তমান বৈমানিক প্রযুক্তি ও কৌশলগত ক্ষমতার ভারসাম্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়বদলের ইঙ্গিত দেয়। এটি প্রমাণ করেছে যে, পশ্চিমা আকাশ আধিপত্য আর একচ্ছত্র নয়, এবং চীনা প্রযুক্তিও এখন বাস্তব যুদ্ধে কার্যকারিতার প্রমাণ রাখছে।
সোমবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
প্রায় ১২ কোটি ডলারের রাফাল ধ্বংস হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ডলারের একটি জে-১০সি দ্বারা—এটি নিছক কৌশলগত সাফল্যের চেয়েও অনেক বড় বার্তা বহন করে। এটি বৈমানিক প্রযুক্তির বিবর্তনে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক চিহ্নিত করে। পাকিস্তানের জন্য এটি একটি কৌশলগত বিজয়, ভারতের জন্য এটি আত্মসমালোচনার সময় এবং বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা পরিমণ্ডলের জন্য এটি এক নির্মম সতর্কবার্তা—পশ্চিমা বিশ্ব আর একচ্ছত্র আকাশ আধিপত্যে নেই।
এই ঘটনার পরদিনই ইউরোনেক্স প্যারিসে দাসো এভিয়েশনের শেয়ার ৬ শতাংশ পড়ে যায়। সাধারণত প্রতিরক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির উপর ভিত্তি করে শেয়ারের ওঠানামা হয়, কিন্তু যুদ্ধকৌশলের কারণে একদিনেই এমন পতন নজিরবিহীন।
অন্যদিকে, চীনা প্রস্তুতকারক এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অব চায়না (এভিআইসি)-এর শেয়ার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে এক লাফে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত কর্মক্ষমতার কারণে বাজারের এই আস্থা স্পষ্টভাবে জে-১০সি’র কার্যকারিতাকে স্বীকৃতি দেয়।
এটি প্রথমবারের মতো ঘটল, যেখানে একটি চীনা প্ল্যাটফর্ম বাস্তব যুদ্ধে একটি পশ্চিমা ‘ফ্ল্যাগশিপ’ যুদ্ধবিমানকে পরাস্ত করল। এর মানে হলো, পশ্চিমা বিমান প্রযুক্তি এখন আর অপরাজেয় নয়। চীনা আকাশশক্তি এখন বিশ্বমঞ্চে প্রমাণিত।
এমনকি রাফালের উন্নত ‘মেটিওর’ ক্ষেপণাস্ত্রকেও কৌশলে পরাস্ত করেছে অপেক্ষাকৃত সস্তা চীনা পিএল-১৫। এটি কি নির্দেশ করে যে ‘ফার্স্ট-টু-লক, ফার্স্ট-টু-কিল’ নীতি প্ল্যাটফর্মের তীক্ষ্ণতা বা গোপনীয়তার চেয়েও বেশি কার্যকর?
রাফালের পতন প্রমাণ করে যে, প্ল্যাটফর্ম-নির্ভরতা নয়, বরং পুরো ‘কিল চেইন’—রাডার, তথ্য-সংযোগ, ক্ষেপণাস্ত্র ও কৌশলগত নীতির কার্যকারিতা—হয় বাস্তব যুদ্ধের নির্ধারক।
এটা ভারতের জন্য শুধু প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগতভাবেও এক অপমানজনক ক্ষতি। রাফালকে ভারতের বিমান শক্তির মুকুট রত্ন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এখন সেই রত্ন খসে পড়েছে।
রাফালের ‘স্পেকট্রা’ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ব্যর্থ হয়েছে হুমকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে—যা ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর টিকে থাকার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। এর ফলে কি ভারত এখন মানববিহীন যুদ্ধব্যবস্থার দিকে ঝুঁকবে? বিমান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার কৌশল কি আরও গুরুত্ব পাবে?
রাফালের পতন তিনটি মূল পরিবর্তন ডেকে আনবে:
১. জে-১০সি এখন রাফাল, ইউরোফাইটার টাইফুন বা এফ-১৬ভি’র মতো পশ্চিমা জেটের সমমানের প্রতিদ্বন্দ্বী।
২. উন্নয়নশীল দেশগুলোর যুদ্ধবিমান কেনার পছন্দের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে।
৩. চীনা প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে বড় ধরনের গতি সঞ্চার করবে।
ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধে স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র আধিপত্য করবে। পিএএফ-এর নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধনীতি এদিন বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে সেন্সর, হামলাকারী প্ল্যাটফর্ম ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে একত্রে সমন্বিত করা হয়েছে।
এই রাফাল বনাম জে-১০সি সংঘর্ষ থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা: যুদ্ধজয়ের জন্য শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়, পুরো ‘কিল চেইন’—ই হচ্ছে মূল চাবিকাঠি।
সবশেষে তিনটি বিষয় উপেক্ষা করা যাবে না: পিএএফ পাইলটদের অসাধারণ প্রশিক্ষণ, তাদের কৌশলগত দক্ষতা এবং আধুনিক আকাশযুদ্ধে দক্ষতার নিখুঁত প্রদর্শন।
পাকিস্তানি পাইলটরা কারিগরি জ্ঞান ও বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়া একত্রিত করে পরিস্থিতির মুহূর্তগত বিশ্লেষণ, উচ্চ-জি কৌশল এবং একাধিক ডোমেইনের সমন্বয় ঘটিয়ে যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছে।
এটি শুধু যন্ত্রের বিজয় নয়, বরং মানুষ ও মননের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।