ডেস্ক রিপোর্ট: রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইসরায়েল পতনের সম্মুখীন হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন প্রভাবশালী ইহুদিবাদী গণমাধ্যমের বিশ্লেষকরা। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ইরনা’ জানিয়েছে, ইহুদিবাদী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ‘ইয়োসি ফের্টার’ দৈনিক হারেতজ-এ এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইসরায়েল কূটনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ছে এবং এই পতনের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা, আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এবং দীর্ঘদিনের মিত্রদের সমর্থন হারানো।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হামাসের অবস্থানের কারণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইতোপূর্বে গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন দুর্ভিক্ষ রোধের অজুহাতে তা প্রবেশে সম্মত হচ্ছেন।
‘ইয়োসি ফের্টার’ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি জি. ডি. ভ্যান্সের ইসরায়েল সফর বাতিল এবং যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে নেতানিয়াহুর প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন বন্ধ করার হুমকি- আমেরিকান ডানপন্থীদের মধ্যে নেতানিয়াহুর সমর্থক মারাত্মক হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।
ফের্টার আরও বলেছেন, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং কানাডার যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তারা তেল আবিব মন্ত্রিসভার কঠোর নিন্দা করেছে। এমনকি জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, যারা বরাবরই ইসরায়েলের ঐতিহ্যগত মিত্র ছিল, তারাও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইহুদিবাদী এই বিশ্লেষক বিদ্রুপ করে লিখেছেন, যখন ইসরায়েল রাজনৈতিকভাবে পতনশীল, তখন এর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ আজারবাইজানে ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের প্রতিনিধির দ্বিগুণ সুবিধা পাওয়াকে ‘জাতিগত বন্ধুত্বের চিহ্ন’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যখন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন ইসরায়েল কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
একই প্রসঙ্গে, ইহুদিবাদী সাংবাদিক নাদাভ ইয়াল বলেছেন, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল রাজনৈতিক ব্যর্থতা, বৈশ্বিক সমর্থন হ্রাস এবং নৈতিক বৈধতা হারানোর মাধ্যমে নিজেকে পরাজিত করেছে। এমনকি নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে যুদ্ধ শেষ করার কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে।
মা’আরিভ পত্রিকার বিশ্লেষক বেন ক্যাসপিট বলেছেন, নেতানিয়াহু একটি অসম্ভব বিজয় খুঁজছেন এবং ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা একঘরে মানুষে পরিণত হয়েছি, আমাদের মিত্ররা আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ব আমাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, কিন্তু নেতানিয়াহু এতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিশ্ব যখন ইসরায়েলকে বৈশ্বিক ঐক্যমত্য থেকে বাদ দিতে চায়, তখন তিনি কেবল গাজার বাসিন্দাদের নির্মূল করার কথা ভাবছেন।
ক্যাসপিট বলেছেন, নেতানিয়াহু সম্পূর্ণ বিজয় চান- এমন একটি বিজয়, যা সামরিক বা রাজনৈতিকভাবে অর্জনযোগ্য নয় এবং তিনি নিজেই এটা ভালো করেই জানেন।
টাইমস জানিয়েছে, এই সমালোচনাগুলো এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন মঙ্গলবার বিকেলে ব্রিটিশ সরকার গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির প্রতিবাদে কিছু জায়োনিস্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে।

Discussion about this post