Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:53 pm

রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট

ডেস্ক রিপোর্ট: আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডে কির্শনারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও আজীবন জনসেবামূলক পদে নিষেধাজ্ঞার রায় বহাল রেখেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবারের এই ঐতিহাসিক রায় দেশটির রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে অ্যাসোসিয়েট প্রেস।

২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা এই নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রথমে ফার্স্ট লেডি ও পরে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় নির্মাণ প্রকল্পের কাজ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, দণ্ডিত ব্যবসায়ী লাজারো বায়েজের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেন এবং এতে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ৭২ বছর বয়সি ফার্নান্দেজকে আটক করতে আর্জেন্টিনার নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়কে একটি আটক কেন্দ্র প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী কার্লোস বেরালদি জানিয়েছেন, বয়স বিবেচনায় তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় সাজা ভোগের আবেদন জানিয়েছেন।

এই রায়ের ফলে আসন্ন বুয়েনস আয়ার্সের আইনসভার নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন।

দীর্ঘ দুই দশক ধরে আর্জেন্টিনার রাজনীতিতে আধিপত্যকারী ফার্নান্দেজ ও তার প্রয়াত স্বামী নেস্টোর কির্শনারের নামানুসারে গড়ে ওঠা ‘কির্শনারিজম’ আন্দোলনের নেত্রী এই রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বুয়েনস আইরেসের প্রধান মহাসড়কগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা দুটি প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলের (চ্যানেল ১৩ এবং টোডোস নোটিসিয়াস) অফিসেও হামলা চালায়, জানালায় ভাঙচুর করে এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ফার্নান্দেজ বলেন, ‘এই বিচারপতিরা কেবলমাত্র তাদের পেছনে থাকা প্রভাবশালী অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর নির্দেশেই চলছে। এটি কোনো রাজনৈতিক বিরোধিতা নয়, বরং দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের বহিঃপ্রকাশ।’

২০১৫ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিদায়ের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২২ সালে ৫১টি সরকারি প্রকল্পে অবৈধভাবে দরপত্র দেওয়ার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ওই প্রকল্পগুলোর চুক্তিমূল্য সাধারণ দর থেকে ২০ শতাংশ বেশি ছিল এবং এতে রাষ্ট্রের প্রায় ৭ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।

আর্জেন্টিনার বর্তমান রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলে এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটাই ন্যায়বিচার।’

তবে ফার্নান্দেজের আইনজীবীরা রায় প্রত্যাহারের দাবিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা দাবি করছেন, মামলার প্রমাণপত্রগুলো সময়মতো তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি এবং ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন হয়েছে।

ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত আরও বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।