ডেস্ক রিপোর্ট: গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলেই যুদ্ধ সমাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের কয়েকটি সূত্র আল আরাবিয়াকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শনিবার সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর অবস্থানে স্পষ্ট পরিবর্তন এসেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলে যুদ্ধ সমাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিছুদিন আগে লেবাননভিত্তিক গণমাধ্যম কেএএন নিউজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, কাতার ইসরাইলকে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। সেখানে তারা জানিয়েছে, একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস। কেএএনের ওই প্রতিবেদনে পর আল আরাবিয়া এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
হামাসের একটি সূত্র কেএএনকে আরও বলেছে, যুদ্ধবিরতিকেন্দ্রিক আলোচনা শুরু করার জন্য বিতর্কিত কিছু বিষয় এড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা হবে। ওসব বিষয়ে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা হবে। এমন অন্যতম বিষয় হলো মিসরীয় সীমান্ত বরাবর অবস্থিত ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ইসরাইলি সেনাদের অপসারণ। এদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। সেনাদের বর্বর হামলায় আরও ২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর থেকে ভূখণ্ডজুড়ে চলা ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। শনিবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার পাশাপাশি লেবাননেও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী এই দেশটি। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করেছে। ইসরাইলি হামলার শিকার এই অবকাঠামোগুলোর মধ্যে রাজধানী সানার কাছে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং হোদেইদাহ ও রাস ইসার বন্দরও রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিরলস এই হামলায় আরও লক্ষাধিক লোক আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। অবরুদ্ধ এই ভ‚খণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য, অনলাইন জরিপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোক সংবাদগুলো তথ্য পর্যালোচনা করে যুদ্ধের প্রথম ৯ মাসে আঘাতের কারণে মৃতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ২৯৮ জন থেকে ৭৮ হাজার ৫২৫ জন হয়েছিল বলে মনে করছেন গবেষকরা। এর মধ্যে গবেষণার ভালো অনুমানটি হলো, গাজায় ৬৪ হাজার ২৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতের সংখ্যা ৪১ শতাংশ কম দিয়েছে।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post