ডেস্ক রিপোর্ট: রোমে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখন স্থগিত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইরানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, দুই পক্ষের বসার নতুন তারিখ ‘ওয়াশিংটনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে’ ঠিক করা হবে।
বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি এ কথা বলেছেন।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চতুর্থ দফার এ আলোচনার শনিবার রোমে হওয়ার কথা ছিল।
ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ‘পরমাণু আলোচনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কূটনীতিক উপায়ে বিরোধ মেটাতে সহায়ক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, আলোচনার পরবর্তী দফার তারিখ জানানো হবে।’
তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আগের দফার আলোচনাগুলোতে মধ্যস্থতা করা ওমান বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পরমাণু নিয়ে দুই পক্ষের পরবর্তী আলোচনা প্রাথমিকভাবে ৩ মে করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ‘লজিস্টিকাল কারণে’ এ তারিখ এখন নতুন করে ঠিক করা লাগবে।
এদিকে আলোচনা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই রোমের চতুর্থ দফার আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিতই করেনি।
কবে, কখন, কোথায় পরবর্তী দফার আলোচনা হবে তা এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি, তবে শিগগিরই হবে বলে আশা করা হচ্ছে, বলেছে ওই সূত্রটি।
ইয়েমেনের হুতিদের সমর্থনের ব্যাপারে ইরানকে ওয়াশিংটনের হুঁশিয়ারি এবং পরমাণু আলোচনা চলার মধ্যেই তেহরানের জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর বৃহস্পতিবার ইরান ‘অসঙ্গত আচরণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য করার’ দায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্তও করেছে।
তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফল হতে পারে এমন আলোচনায় জড়িত হতে চায় এবং সেজন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমায়েলি বাঘেরি এমনটা বলেছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কূটনীতি ব্যর্থ হলে ইরানের ওপর হামলার হুমকি দেওয়া ট্রাম্প এর আগে তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্রধর হওয়া ঠেকাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু ইয়েমেনের হুতি ইস্যু দুই পক্ষের বিরোধ কমিয়ে আনার সম্ভাবনা ফিকে করে দিয়েছে।
বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক বার্তায় হেগসেথ লিখেছেন, ‘ইরানের প্রতি বার্তা: হুতিদের প্রতি আপনাদের প্রাণঘাতী সমর্থন আমরা দেখছি। আপনারা আসলে কী করছেন আমরা জানি। মার্কিন সামরিক বাহিনী কী করতে সক্ষম আপনারা খুব ভালোভাবে জানেন- আর আপনাদের সতর্ক করা হল। আমাদের পছন্দমতো সময়ে ও স্থানে আপনাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
পরে হেগসেথ তার ব্যক্তিগত এক্স একাউন্টে মার্চে ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি বার্তা ফের পোস্ট করেন যেটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হুতি গোষ্ঠীর চালানো যে কোনো হামলার জন্য তিনি ইরানকে দায়ী বলে ধরবেন।
এর আগে ইরানের নেতা বলেছিলেন, হুতিরা স্বাধীনভাবে কাজ করে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাঞ্চল হুতিদের নিয়ন্ত্রণ আছে। তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরাইলি ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে আঘাত হানছে।
মার্চ থেকে হুতিদের ওপর ফের আঘাত হানা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইয়েমেনে হুতি লক্ষ্যস্থলগুলোতে হাজারবারের বেশি আঘাত হেনেছে বলে পেন্টাগন জানিয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে পেন্টাগন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য এটি একটি আদর্শ অবস্থান।
এছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি বিমানবাহিনী রণতরী অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও মোতায়েন করেছে।
তেহরান ও ওয়াশিংটন, উভয়েই বলছে, তারা কূটনীতি অনুসরণে বদ্ধপরিকর। কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বিরোধের কারণে তারা এখনও পরস্পর থেকে অনেক দূরে রয়েছে।
সম্পর্ক উন্নয়নে শুক্রবার রোমে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিরও বৈঠক করার কথা ছিল।
কিন্তু এখন এ বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক স্থগিত হওয়ার কথা জানানো ঊর্ধ্বতন ইরানি কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে এ কথা জানান।

Discussion about this post