ডেস্ক রিপোর্ট: ইয়েমেনের সস্বস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েল-মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরও একবার চরম ব্যর্থতার পরচিয় দিয়েছে।
ইসরায়েলের চতুর্দিকের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চূর্ণ করে দিয়ে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তেলআবিবের নিকটবর্তী বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সফল হামলা চালিয়েছে।
এতে সৃষ্ট চাঞ্চল্যে দেশটির অন্তত ৩০ লাখ ইসরায়েলি নাগরিক মাটির নিচে বাংকারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
রোববার (৪ মে) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলের চার স্তরের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি—‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’, ‘অ্যারো’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘থাড’—সবগুলোকে ব্যর্থ করে বিমানবন্দরের কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে।
এতে প্রায় ২৫ মিটার গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। আহত হন অন্তত সাতজন। এদের মধ্যে চারজন ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে এবং বাকি তিনজন আতঙ্কে বাংকারে ছুটতে গিয়ে আহত হন।
ঘটনার পরপরই দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের সমস্ত ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজগুলো বিকল্প রুটে পাঠানো হয় অথবা বাতিল করা হয়। বিমানবন্দর এলাকায় জারি করা হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইদিয়োথ আহরোনোতের বরাতে জানা গেছে, বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাটির নিচে তৈরি বাংকারগুলোতে আশ্রয় নেয় লাখো ইসরায়েলি। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ৩০ লাখ মানুষ সেসময় আশ্রয়প্রাপ্ত নিরাপদ এলাকাগুলোতে চলে যান।
হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছে। শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এই অভিযান ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অব্যাহত বর্বরতার জবাব।
আঞ্চলিক সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হুতিদের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল পক্ষের পক্ষ থেকেও এ ধরনের আক্রমণ ইসরায়েল এবং তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কৌশল নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপারসনিক প্রযুক্তি এত দ্রুতগতিতে চলে যে তা সনাক্ত ও ধ্বংস করা এখনো অধিকাংশ দেশের পক্ষেই কঠিন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) স্বীকার করেছে যে তারা ক্ষেপণাস্ত্রটি ঠেকাতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েনকৃত আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি।
এ হামলার ঘটনায় রোববারের নির্ধারিত মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করেছে ইসরায়েল সরকার। জেরুজালেম পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এখন ইয়েমেন নিয়ে তার সামরিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে এবং হুতিদের বিরুদ্ধে সরাসরি জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ঘটনাকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিশেষত, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এত গভীরে হুতিদের হামলা পৌঁছে যাওয়া—এটা স্পষ্ট বার্তা দেয় যে আঞ্চলিক প্রতিরোধ শক্তিগুলোর সামরিক সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে।

Discussion about this post