ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই ভাইরাস আবারও ২০০৪-০৫ সালের মতো বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিতে পারে। খবর রয়টার্সের।
বিশেষ করে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সম্প্রতি শুরু হওয়া প্রাদুর্ভাব ইতোমধ্যেই ইউরোপসহ আরও কয়েকটি মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটেই গতকাল মঙ্গলবার এক জরুরি বার্তায় ডব্লিউএইচও এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলোকে সতর্ক করেছে।
জেনেভায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে গিয়ে ডব্লিউএইচও-র চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ানা রোহাস আলভারেজ জানান, বিশ্বের ১১৯টি দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ বর্তমানে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা এবং কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার আগের মহামারি শুরু হয়েছিল দ্বীপাঞ্চলগুলোতে। ২০০৪-০৫ সালের সেই প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন।’
২০২৫ সালের শুরু থেকে ফের নতুন করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে দেখা গেছে। লা রিইউনিয়ন, মায়োত এবং মরিশাস—এই তিনটি ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সংক্রমণ। লা রিইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন আলভারেজ।
তিনি সতর্ক করে বলেন, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া এবং কেনিয়ার মতো আফ্রিকান দেশগুলোতেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি মহামারি আকারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।
ইউরোপেও রোগটি ছড়াতে শুরু করেছে। বাইরের দেশ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আগমনের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও এখন মশার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটছে।
জানা গেছে, ১ মে থেকে ফ্রান্সে অন্তত ৮০০টি চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যেগুলো বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু এলাকায় ইতোমধ্যেই ১২টি স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে—যার মানে এই আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাইরে ভ্রমণ না করেও স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতালিতেও সম্প্রতি এক রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা প্রতিকার নেই। এটি মূলত টাইগার মশা নামে পরিচিত এডিস প্রজাতির মাধ্যমে ছড়ায়, যা ডেঙ্গু ও জিকার মতো অন্যান্য ভাইরাসও ছড়িয়ে দেয়। দ্রুত ও বিস্তৃত হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা এটিকে ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনই ব্যাপকভাবে সচেতনতা, নজরদারি এবং মশা নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ভাইরাসটি নতুন করে বিশ্বজুড়ে মহামারির রূপ না নিতে পারে।