ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অধিকার হারিয়েছে। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন বাতিল করে দেয় — যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করতে পারবে না।
শুক্রবার (২৩ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোএম এক চিঠিতে জানান, ‘এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে’।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘হার্ভার্ড একাধিকবার সরকারি অনুরোধ উপেক্ষা করেছে, ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, এবং হামাসপন্থি সহানুভূতি ও বিভাজনমূলক বৈচিত্র্য নীতি অবলম্বন করছে’।
সরকারের নজরদারিতে না আসার ফল
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হার্ভার্ড সচেতনভাবে সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বারবার সতর্ক করার পরেও অবাধে এমন একটি শিক্ষা পরিবেশ বজায় রেখেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এর আগে এপ্রিল মাসে একটি চিঠিতে প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় যদি নির্দিষ্ট নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি হার্ভার্ডসহ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তার ভাষায় ‘উইক ও প্রো-টেররিস্ট মতাদর্শ’ ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই দাবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিলেও সরকার এবার সরাসরি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিল।
প্রভাব পড়বে হাজারো শিক্ষার্থীর ওপর
হার্ভার্ডের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশই বিদেশি, যাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকে ইতোমধ্যে ভর্তি কার্যক্রমের অপেক্ষায় ছিলেন, অনেকেই গবেষণা ও অধ্যয়নের মাঝপথে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
প্রতীকী লড়াই না রাজনৈতিক বার্তা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়নি, বরং এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক ও আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমের যে প্রবণতা ট্রাম্প প্রশাসন দেখাচ্ছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা।
হার্ভার্ড, যা এ পর্যন্ত ১৬২ জন নোবেলজয়ী তৈরি করেছে, সেই প্রতিষ্ঠান আজ সরাসরি প্রেসিডেন্টের রোষানলে পড়েছে — এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন রাজনীতিতে অঙ্গীকৃত মতাদর্শের লড়াই চরমে পৌঁছেছে।