ইউএস বেঙ্গল বাংলাদেশ বুরোঃ বাংলাদেশে অবৈধ যানবাহন এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি এত পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে যে বাংলাদেশের পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, শত চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ।
এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শক্ত অবস্থানে যেতে পারছে না প্রশাসন। কিছু হলেই আন্দোলনে নেমে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি এবং গোষ্ঠীর লোকজন। এটাও এ সকল যানবাহন নিয়ন্ত্রণের প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে।
কিছুদিন আগে ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো রিক্সা কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ নিলে আন্দোলনে নামে এসব চালক, ফলে হোঁচট খেতে হয়েছে এখানেও। আর এই সকল ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরের মানুষজন প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকছে বিশাল জ্যামে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টাইম ফ্রেম।
রাজধানী ঢাকাবাসী নাকাল তীব্র যানজটে। যানজটে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলে যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা কাজে আসছে না। দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি সড়ক। চালকরা লাইন-লেন না মেনেই গাড়ি চালাচ্ছে, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক সিগন্যাল লাইট বসিয়েও পুলিশ হাতের ঈশারায়ই সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করায় সড়কে নেই ডিজিটালের ছোঁয়া। এছাড়া শৃঙ্খলাহীন ট্রাফিক ব্যবস্থায় যানজট বৃদ্ধি পেলেও এক শ্রেণির ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য কিংবা মামলা দায়েরে বেশি আগ্রহ বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি ঢাকার সড়কে চলছে। দিনের পর দিন তাই যানজট নিরসনের দায় ট্রাফিক পুলিশের ঘাড়ে বর্তায়। যদিও দায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার। ট্রাফিক পুলিশ সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করলেও ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ বিশৃঙ্খল। এছাড়া রয়েছে ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক সবাই যেন নেমে পড়েছে সড়কে। এসব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
যাত্রীরা বলছেন, রাস্তাগুলোতে একদিকে গাড়ির যানজট, অন্যদিকে এ স্থবির পরিস্থিতিতে যানবাহন চালকরাও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানায় অবস্থা আরো প্রকট হয়ে ওঠেছে। আর নিয়ম মেনে না চলার কারণে সৃষ্ট যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বাস-মিনিবাসগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। রাস্তা দখল করেও বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। সেখানে চলে চাঁদাবাজি। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশ টাকা আদায় করে। এছাড়াও মামলার কারণেও দাঁড় করানোর কারণে পেছনের গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একারণেও যানজট দীর্ঘ হয়।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অবশেষে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দেন তারা। সড়কের যানজটের চিত্র দেখে অনেকে আবার বাসায়ও ফিরে যান। কিছু সড়কে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। গুলিস্তান এলাকায় প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজির কারণে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
জানা গেছে, যানজটের একই চিত্র পুরো রাজধানীজুড়েই। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, রামপুরা, বাড্ডা, বারিধারা, উত্তরা, মিরপুরসহ সব এলাকার চিত্র ছিল প্রায় একই।
বিশেষ করে অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এ সময় রাজধানীতে তীব্র যানজট থাকে। এসময় একটি মোড় অতিক্রম করতে যানবাহনগুলোকে ৪ থেকে ৫টি সিগনাল অপেক্ষা করতে হয়।সরকারের এই বিষয়ে গবেষণা করা দরকার যে, পিক আওয়ার এবং অফ পিক আওয়ারে কোন রাস্তায় কী পরিমাণ ট্রাফিক হয় তার ওপর গবেষণা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। এটা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

Discussion about this post