ডেস্ক রিপোর্ট: উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে। এই অস্ত্র ব্যবস্থা দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে। শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) নেতা কিম জং উনের জাহাজ নির্মাণ কারখানা পরিদর্শনের খবর প্রকাশ করে। এ সময় তারা ‘পারমাণবিক শক্তিচালিত কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন’-এর ছবি প্রকাশ করে।
কেসিএনএ সাবমেরিনটির বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি, তবে জানিয়েছে যে কিম জং উনকে এর নির্মাণ কাজ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
সিউলের হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ মুন কেউন-সিক বলেছেন, এটি সম্ভবত ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টন ওজনের একটি সাবমেরিন। যা প্রায় ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, ‘কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র’ শব্দটি ব্যবহারের অর্থ হলো এটি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। এটি আমাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।’
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজস বলেছেন, ‘আমরা এই দাবিগুলো সম্পর্কে সচেতন, তবে এই মুহূর্তে আরও তথ্য দেওয়ার মতো কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
২০২১ সালে একটি বড় রাজনৈতিক সম্মেলনে কিম জং উন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক হুমকি মোকাবিলায় অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ছাড়াও সলিড-ফুয়েল আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক অস্ত্র, গুপ্তচর উপগ্রহ এবং মাল্টি-ওয়ারহেড ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়া এসব অস্ত্র তৈরির জন্য একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির জন্য উত্তর কোরিয়া কীভাবে প্রযুক্তি ও সম্পদ সংগ্রহ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞ মুন কেউন-সিক বলেছেন, রাশিয়া সম্ভবত উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরির প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে। এর বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রচলিত অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার বর্তমানে ৭০ থেকে ৯০টি ডিজেল-চালিত সাবমেরিন রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাবমেরিন বহর। তবে এগুলোর বেশিরভাগই পুরনো এবং শুধু টর্পেডো ও মাইন নিক্ষেপে সক্ষম। ২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছিল যে তারা তাদের প্রথম ‘কৌশলগত পারমাণবিক আক্রমণ সাবমেরিন’ চালু করেছে। তবে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং ধারণা করেন যে এটি ২০১৯ সালে উন্মোচিত একটি ডিজেল-চালিত সাবমেরিন।
২০১৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া একাধিক আন্ডারওয়াটার-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে এসব পরীক্ষা একই ২ হাজার টন ওজনের সাবমেরিন থেকে করা হয়েছে, যার একটি মাত্র লঞ্চ টিউব রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে একটি পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করেন, যা সক্রিয় পরিষেবায় নেই।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে উত্তপ্ত বক্তব্য দিচ্ছে। আগামী সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তাদের বার্ষিক যৌথ সামরিক মহড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে।
কিম জং উন জাহাজ নির্মাণ কারখানা পরিদর্শনকালে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ ও পানির নিচের যুদ্ধজাহাজ আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি শত্রুশক্তির ‘গানবোট কূটনীতি’ মোকাবিলায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী যুদ্ধজাহাজ তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন।
খবর : এনডিটিভি

Discussion about this post