ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘদিনের বৈরিতা ও সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংঘাতের জেরে আকাশসীমা ব্যবহারে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
শুক্রবার (২৩ মে) একযোগে দেওয়া ঘোষণায় দুই দেশই নিশ্চিত করে যে, নিবন্ধিত বা নিয়ন্ত্রিত কোনো বিমান আপাতত এক অপরের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুতে সামরিক সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয় উভয় দেশ। এরপর শুক্রবার সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
পাকিস্তানের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারতের নিবন্ধিত, পরিচালিত, মালিকানাধীন বা ভাড়া নেওয়া কোনো বিমানই পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি ভারতীয় সামরিক বিমানও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৪ জুন স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
পাকিস্তানের ঘোষণা আসার পরপরই ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পাল্টা পদক্ষেপের কথা জানায়। এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের নিবন্ধিত, মালিকানাধীন বা ভাড়া নেওয়া সামরিক ও বেসামরিক বিমান ২৩ জুন পর্যন্ত ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু তীর্থযাত্রী। ভারত এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে।
পরবর্তীতে ভারত ‘অপরেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও দেশটির ভূখণ্ডে হামলা চালায়। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এরই মধ্যে নয়াদিল্লি সিন্ধু নদ পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে, বন্ধ করে দেয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ভিসা কার্যক্রম। সীমান্তও কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে।
এদিকে পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশের সংঘাত প্রশমনে হস্তক্ষেপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যস্থতায় গত ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি থেকে যায় অমীমাংসিত।
বিশ্লেষকদের মতে, আকাশসীমা ব্যবহারে এই নিষেধাজ্ঞা কেবল সামরিক বা কূটনৈতিক সংকেতই নয়, এটি আঞ্চলিক যাত্রী ও মালবাহী বিমান চলাচলেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার পুরো আকাশপথে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
উভয় দেশের আকাশসীমা বন্ধ থাকা মানে শুধু কৌশলগত বার্তা নয়, বরং সাধারণ মানুষ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও এক ধরনের শাস্তি। এখন প্রশ্ন হলো- সংঘাত কি আরও বাড়বে, নাকি আকাশপথ খোলার মাধ্যমে শুরু হবে শান্তির সম্ভাবনা?