Print Date & Time : 8 May 2025 Thursday 9:10 pm

পালটা হামলার প্রস্তুতি, চরম প্রতিশোধ নেবে পাকিস্তান

ডেস্ক রিপোর্ট: কাশ্মীর হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের গর্জন-তর্জন-হুংকারই বলে দিচ্ছিল বড় কিছু ঘটতে চলেছে দুদেশের সীমান্তে। শুধু মেঘ গুড়গুড়েই ক্ষান্ত হবে না এবার। শেষ পর্যন্ত ঘটলও তাই! মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) পাকিস্তানের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়ে ভারতের যুদ্ধবিমান। তারপরই পাকিস্তান ভূখণ্ডের (আজাদ কাশ্মীরে) ৯টি লক্ষ্যবস্তুর ২১টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মাত্র ২৫ মিনিটেই ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নিজ সীমানায় ফিরে আসে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো। ঘুমন্ত জনপদে মধ্যরাতের এ আকস্মিক হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা পাকিস্তান। আগ্রাসনের জবাবে এবার আর কূটনৈতিক ভাষা নয়, সরাসরি পালটা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। প্রতিটি আগ্রাসনের দ্বিগুণ জবাব দেওয়া হবে। নেওয়া হবে চরম প্রতিশোধ। তিন বাহিনীকে বদলা নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতাও দিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠকে এমন স্পষ্ট বার্তাই দিয়েছেন তিনি। ডন, জিও, বিবিসি।

শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিতে (এনএসসি) এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণকে ‘অবৈধ ও উসকানিমূলক’ বলে নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেছেন, ‘ভারত বুঝতে পেরেছে যে, পাকিস্তান কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। ভারত তার আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের পুরোপুরি প্রতিরোধ করেছে। শাহবাজ গর্ব করে আরও বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের (ভারত) জন্য ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত ছিল। এজন্য যুদ্ধবিমান প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। এনএসসিতে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেছেন, শত্রুপক্ষ আমাদের শান্তির আকাক্সক্ষাকে দুর্বলতা হিসাবে বিবেচনা করে ভুল করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে এর জবাব দেব। এবার একটি হামলার জবাবে দুটি দেওয়া হবে। সংসদে ভারতের এ গর্হিত পদক্ষেপকে ‘রাতের আঁধারে ভীরু কাপুরুষের মতো হামলা’ বলে উল্লে­খ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান (পিপিপি) বিলাওয়াল ভুট্টো।

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলার (২২ এপ্রিল) দুই সপ্তাহ পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানের মধ্য দিয়ে মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ভারত। দেশটির দাবি, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। এদিকে ৯ লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় ৭৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। ভারতের বিমান হামলার পর কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুদেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। এতে ভারতশাসিত কাশ্মীরে অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের ৭৫ থেকে ৮০টি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ মসজিদেও হামলা চালিয়েছে তারা। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও ১টি ড্রোন ভ‚পাতিত করেছে। তবে জম্মু-কাশ্মীরে এখন পর্যন্ত তিনটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। হামলা-পালটা হামলা নিয়ে উভয় দেশের মাঝে তীব্র উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইসহাক দার বলেছেন, ‘পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু না করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। পাকিস্তান সংযমের চর্চা করেছে এবং শুধু আক্রমণে জড়িত বিমানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যদি পাকিস্তানের বিমানবাহিনীকে হামলা শুরু করার জন্য পূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হতো, তাহলে এই সংঘাতের ফলাফল উল্লে­খযোগ্যভাবে আলাদা হতো।’ ভারতের হামলার ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য কাজ’ বলেও অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন দার।

সীমান্ত উত্তেজনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দুপারের বাসিন্দারা। ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে চিন্তায় ছিলেন তারা। মঙ্গলবারের হামলার পর তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। এক বাসিন্দা বলেছেন, রাত ১২টার পর থেকে যুদ্ধবিমানের গর্জন শোনা যাচ্ছিল। এরপর রাত ২টার দিকে বজ্রপাতের মতো বিকট আওয়াজ শুরু হয়। বাইরে তাকিয়ে দেখি আগুনের বিশাল গোলা। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা। চৌকিবাল এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ আহমাদ বলেছেন, ‘হামলা শুরু হলে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি আর্টিলারি শেল এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে এতে আতঙ্কিত হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন বাসিন্দারা। পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছে অনেকে। সকালে গোলাগুলি বন্ধ হলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি।’ সীমান্তের ওপারে, আজাদ কাশ্মীরের বাসিন্দারাও জানিয়েছেন একই রকম অভিজ্ঞতার কথা। নীলম উপত্যকার বাসিন্দা জাওয়াদ আহমেদ পারাস বলেছেন, ‘কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হামলা চালিয়েছে ভারত।’