ডেস্ক রিপোর্ট: লাহোরে শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা, শিক্ষাবিদ ও সাবেক সিনেটর অধ্যাপক সাজিদ মির। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তার স্পাইন সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়েছিল, যার পর থেকে তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন। শনিবার ভোররাতে লাহোরের একটি স্থানীয় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সামা টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৩৮ সালের ২ অক্টোবর পাঞ্জাবের সিয়ালকোটে এক ধর্মভীরু কাশ্মিরি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন প্রফেসর সাজিদ মির। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মির সিয়ালকোটির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স এবং ১৯৬৯ সালে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
বিদেশে শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয় নাইজেরিয়ায়। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসার পর তিনি সক্রিয়ভাবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের টিকিটে প্রথমবার সিনেটর নির্বাচিত হন। পরে আরও কয়েকবার সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সিনেটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি সিনেটের নিয়ম-নীতি, সরকারি প্রতিশ্রুতি, প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটিতেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
২০০৯ সালে আলেম ও টেকনোক্র্যাটদের জন্য সংরক্ষিত আসনে তিনি পুনরায় সিনেটর নির্বাচিত হন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সপ্তমবারের মতো কেন্দ্রীয় জমিয়ত আহলে হাদীস পাকিস্তানের আমির নির্বাচিত হন — যা দলীয় নেতৃত্বে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।
অধ্যাপক মির সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ধর্মীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি পাকিস্তানের ধর্মীয় কূটনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি ইসলাম ও পাকিস্তানের জন্য অমূল্য অবদান রেখেছেন, তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক ও নিষ্ঠাবান নেতা।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ এক শোকবার্তায় বলেন, তিনি ছিলেন ইসলামী চিন্তাচর্চার আলোকবর্তিকা এবং ভারসাম্যপূর্ণ মতবাদের প্রবক্তা।
তিনি মরহুমের পরিবার এবং ধর্মীয় সমাজের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হামজা শাহবাজ বলেন, তার মৃত্যু ইসলামী বিশ্বে একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ধর্মীয় চিন্তাবিদ এবং অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, তার অনুপস্থিতি এমন এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে যা কেবল একজন শহিদের মাধ্যমেই পূরণ হতে পারে।
ইস্থেকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির প্রধান আব্দুল আলিম খান বলেন, তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ রাখবে।
জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, প্রফেসর মির ছিলেন ঐক্যের প্রতীক এবং একজন মডারেট নেতৃবৃন্দ। সংসদের ভেতরে ও বাইরে তার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা ছিল।
জামায়াত ইসলামি প্রধান হাফিজ নাঈমুর রহমান ও সাবেক আমির সিরাজুল হক মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, জাতীয় জীবনে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রানা তানভির হুসেইন বলেন, তিনি ছিলেন একজন মহান ধর্মীয়, একাডেমিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যার অবদান দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।