ডেস্ক রিপোর্ট: পশ্চিমা দাপট ও নিষেধাজ্ঞার চাপ মোকাবিলায় এক কূটনৈতিক জোট গড়ছে রাশিয়া, চীন ও ইরান। সম্প্রতি তেহরানে এই তিন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে পারমাণবিক কর্মসূচি, পশ্চিমা আধিপত্য, একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং সম্ভাব্য ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশ নিয়ে চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও হুমকির বিরুদ্ধে পারস্পরিক কূটনৈতিক সমন্বয় এবং সহযোগিতা বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি।
বৈঠকে ইরানের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি আবার জাতিসংঘের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করে, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ হবে। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে সরে যায়, তখনই তারা এ চুক্তির ধারা সক্রিয় করার অধিকার হারিয়েছে।’
গারিবাবাদি আরও জানান, বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত তেহরান, মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করেছে। পাশাপাশি তিনি পশ্চিমা কূটনীতির ‘বলপ্রয়োগের কৌশল’-এর বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, যা ইরানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল বলে দাবি করেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বৈঠকটিকে ‘একতরফাবাদ ও আধিপত্যবাদী চর্চার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিরোধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শুধু ইরানেই নয়, বরং বিশ্ব দক্ষিণের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে।
তেহরান মনে করছে, এই ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ ভবিষ্যতে একটি বহুমুখী আঞ্চলিক কাঠামো তৈরির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। বৈঠকে তিন দেশই একমত হয় যে, আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে পারস্পরিক পরামর্শ ও সহযোগিতা আরও গভীর করা হবে।
বৈঠকের পরপরই ইরান ও ইউরোপীয় ‘ট্রোইকা’—ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের—মধ্যে ইস্তাম্বুলে আরেক দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই আলোচনায় পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ ও ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থা নিয়ে মতবিনিময় হবে বলে নিশ্চিত করেছেন গারিবাবাদি। তিনি জানান, তেহরান সেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত প্রস্তাব উত্থাপন করবে। তবে ইরানের অবস্থান স্পষ্ট— স্থায়ী সমাধানের পূর্বশর্ত হিসেবে সব নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ ও নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক ও তাতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে রাশিয়া, চীন ও ইরান এখন এক যৌথ কৌশলগত বলয়ে রূপ নিচ্ছে, যার প্রধান লক্ষ্য পশ্চিমা একাধিপত্য ও চাপের বিরুদ্ধে একজোট প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
খবর : ইরনা, আল-মায়াদিন

Discussion about this post