ডেস্ক রিপোর্ট: মডারেশন ব্যবস্থায় দুর্বলতার অভিযোগে কয়েকদিন আগে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাভেল দুরভ।
গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রকাশ্য বিবৃতিতে তিনি এ অবস্থানের কথা জানান। সেই সঙ্গে টেলিগ্রামকে ‘এক ধরনের নৈরাজ্যকর স্বর্গ’ বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে তা ‘একেবারেই অসত্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
দুরভকে গত ২৫ আগস্ট উত্তর প্যারিসের একটি বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন, মাদক পাচার, জালিয়াতি এবং শিশু যৌন নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত বিবৃতিতে দুরভ বলেন, প্ল্যাটফর্মটিতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করা একইসঙ্গে ‘বিস্ময়কর’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর পদক্ষেপ’। ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে যদি কোনো দেশ অসন্তুষ্ট হয়, তবে পরিষেবাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা শুরু করাই প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন।
রাশিয়ান বংশোদ্ভূত এই ধনকুবের বলেন, তার ব্যবস্থাপনায় চলা টেলিগ্রামে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধের জন্য প্রাক-স্মার্টফোন যুগের আইন ব্যবহার করে অ্যাপের প্রধান নির্বাহী হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করা একটি বিভ্রান্তিকর পদ্ধতি।
‘প্রযুক্তি তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন। প্রযুক্তি টুলের সম্ভাব্য অপব্যবহারের জন্য উদ্ভাবককে যদি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হয়, তাহলে কেউই আর নতুন কিছু তৈরি করবে না।’
বিবিসি লিখেছে, টেলিগ্রাম যে নিখুঁত ছিল না তা অবশ্য স্বীকার করেছেন দুরভ। তিনি বলেছেন, তার সঙ্গে এবং টেলিগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষের। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে অ্যাপটির একজন অফিসিয়াল প্রতিনিধি আছে।
দুরভ বলেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমে টেলিগ্রামকে এক ধরনের নৈরাজ্যকর স্বর্গরাজ্য বলে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই অসত্য। আমরা প্রতিদিন লাখ লাখ ক্ষতিকর পোস্ট ও চ্যানেল সরিয়ে নিচ্ছি।’
টেলিগ্রাম একটি গ্রুপে দুই লাখ সদস্য রাখার সুযোগ দেয়, যার ফলে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং ষড়যন্ত্রবাদী, নব্য-নাৎসি, শিশুকামি বা সন্ত্রাসী কনন্টেন্ট ভাগাভাগি করা সহজ হয় বলে সমালোচকরা যুক্তি দিয়ে আসছেন।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে সহিংসতার জন্য টেলিগ্রামের কিছু ডানপন্থি চ্যানেলকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব চ্যানেলের জন্য সেখানে অ্যাপটিকে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে।
টেলিগ্রাম কিছু গ্রুপ সরিয়ে নিয়েছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্বিকভাবে চরমপন্থি এবং অবৈধ কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া ও মেসেঞ্জার অ্যাপের তুলনায় টেলিগ্রামের মডারেশন ব্যবস্থা বেশ দুর্বল।
সাড়ে ৯ কোটি ব্যবহারকারীর টেলিগ্রামের বিষয়ে দুরভ তার বিবৃতিতে স্বীকার করেছেন, মেসেজিং অ্যাপটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ‘আকস্মিক বৃদ্ধি’র কারণে ‘যন্ত্রণা বাড়ছেই, যার ফলে অপরাধীরা সহজেই প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার করছে’।
এসব দুর্বলতার উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে তিনি নজর রাখবেন বলে বিবৃতিতে বলেছেন।
অনলাইনে শিশু নিপীড়নের উপাদান শনাক্ত এবং সরানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে টেলিগ্রাম অস্বীকৃতি জানানোর পর এ বক্তব্য এলো বলে বিবিসি জানিয়েছে।