ডেস্ক রিপোর্ট: পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অনুযায়ী রক্ষাকবচের দাবিতে ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাদাখে আন্দোলরত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনাম ওয়াংচুককে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে, লাদাখের বেশ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে এবং রাজধানী লেহ শহরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার তরুণদের বিক্ষোভ-আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে, মৃত্যু হয় চার জনের। আহত হন ৫০এর বেশি মানুষ, যাদের একটা বড় অংশ পুলিশ-কর্মী।
যুব-সমাজের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘লাদাখ অ্যাপেক্স বডি’ এবং ‘কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ নামে দুটি সংগঠন। তবে আন্দোলনের মুখ হিসাবে ছিলেন ‘থ্রি ইডিয়েটস’ ছবির সূত্রে বহুল পরিচিত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনাম ওয়াংচুক।
কারগিল মুসলমান প্রধান অঞ্চল, আর লাদাখে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার দাবির পাশাপাশি যে ষষ্ঠ তফশিল অনুযায়ী রক্ষাকবচের দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা, ওই তফশিল অনুযায়ী আদিবাসীদের অধিকার, তাদের পরিচয় এবং তাদের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা হয়।
লাদাখ অ্যাপেক্স বডি গত ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দাবি নিয়ে অনশন আন্দোলন শুরু করেছিল। সোনাম ওয়াংচুকও ওই অনশনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বুধবারের সহিংসতার পরে ওয়াংচুক বিবিসিকে জানান যে অনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
শুক্রবার গ্রেফতার হওয়ার আগে বিবিসিকে দীর্ঘ সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন সোনাম ওয়াংচুক।
তিনি বলেছিলেন, এই আন্দোলনে বড় সংখ্যায় যুবক-যুবতীরা অংশ নিচ্ছেন। যুব-সমাজের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। তাদের মনে হচ্ছিল যে এতজন মানুষ এতদিন ধরে অনশন করছেন, কিন্তু সরকার ছয়ই অক্টোবর আলোচনার তারিখ দিচ্ছে। এটাই তাদের ক্ষিপ্ত করে তোলে। কিন্তু পুলিশের কিছুটা ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। তারা শরীরের এমন জায়গা লক্ষ্য করে গুলি না চালাতে পারত যাতে প্রাণ চলে যায়। গোড়ার দিকে পুলিশের কোনও ভুল ছিল না, কিন্তু পরে নিরস্ত্র মানুষের ওপরে গুলি চালায় পুলিশ।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য ওয়াংচুককেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
তার উসকানিমূলক ভাষণের জন্যই জনতা ক্ষেপে গিয়ে সহিংসতা শুরু করে, বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এও বলেছে যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরেই অনশন আন্দোলন শেষ করে দিয়ে ওয়াংচুক অ্যাম্বুলেন্সে চেপে নিজের গ্রামে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি কোনও চেষ্টাই করেন নি।
সোনম ওয়াংচুকই হয়ে উঠেছেন মধ্যমণি
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় আমির খান অভিনীত ‘র্যাঞ্চো’ চরিত্রটি তৈরি হয়েছিল সোনম ওয়াংচুকের আদলে। ওই সিনেমার পর লাদাখে তার তৈরি স্কুলটিও পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় হয়ে ওঠে। সমাজ ও শিক্ষা নিয়ে মশগুল থাকা ৫৯ বছরের এ মানুষটি ২০১৯ সাল থেকে লাদাখের ভঙ্গুর পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হয়ে ওঠেন।
লাদাখের প্রকৃতি, পরিবেশ, জনগণ, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করতে থাকেন ওয়াংচুক। উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে নির্বিচার প্রকৃতি নিধনের প্রতিবাদে অনশন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। লাদাখের খনিজ সম্পদ শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতাও তিনি করতে থাকেন।
এভাবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ছাপিয়ে একসময় সোনম ওয়াংচুকই হয়ে ওঠেন আপামর লাদাখি মানুষের প্রতিনিধি। দাবি আদায়ে দিল্লি অভিযানও তিনি করেছিলেন।
ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যান্য দাবিতে সরব সোনম ওয়াংচুক সম্প্রতি পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন। এসব দাবির সমর্থনে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নতুন করে অনশন শুরু করেন।
বুধবারের গোলমালের জন্য ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকের সংস্থার বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তার লাইসেন্স বাতিল করেছে ভারত সরকার। তার সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তও শুরু করেছে।

Discussion about this post