Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 2:57 pm

তুর্কি হামলায় সিরিয়ায় ১০ লাখের বেশি মানুষ পানি সংকটে

ডেস্ক রিপোর্ট: তুরস্কের উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় চালানো বিমান হামলায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে দশ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে আন্তর্জাতিক আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি-অধ্যুষিত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ১০০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলো তেলক্ষেত্র, গ্যাস স্থাপনা এবং বিদ্যুৎ স্টেশন লক্ষ্য করে হয়েছে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ ও চরম খরার প্রভাব থাকা এই অঞ্চল এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

২০২৩ সালের অক্টোবরের এক হামলায় আলউক পানি স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় এই স্টেশন থেকে হাসাকেহ প্রদেশের দশ লাখ মানুষ পানি পেত। এখন প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে পানি ট্যাংকারে সরবরাহ করা হয়।

তুরস্ক জানিয়েছে, তারা কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আয় ও সক্ষমতার উৎস লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে। তবে তারা দাবি করে আসছে, বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু ছিল না। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গত বছর বলেছিলেন, পিকেকে ও ওয়াইপিজি-র অবকাঠামো এবং শক্তি স্থাপনাগুলো আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু।

বিবিসি সরেজমিনে দেখতে পেয়েছে, হাসাকেহ শহরের মানুষ ট্যাংকার থেকে পানি পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। ট্যাংকার চালক আহমাদ আল-আহমদ বলেন, এখানে পানি সোনার চেয়েও দামি। মানুষ শুধু একটু পানি চায়।

হাসাকেহ শহরের পানি বোর্ডের সহ-পরিচালক ইয়াহিয়া আহমাদ বলেন, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া এখন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।

কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন অভিযোগ করেছে, তুরস্ক তাদের জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আরিফ আব্রাহাম বলেন, তুরস্কের এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হতে পারে।

২০১৯ সালে তুরস্ক রাস আল-আইন দখল করার পর থেকেই আলউক পানি স্টেশনের পানি সরবরাহ বারবার বন্ধ হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৯ বার পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলা যুদ্ধাপরাধ হতে পারে। আন্তর্জাতিক আইনজীবী প্যাট্রিক ক্রোকার বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত।

তুরস্ক অবশ্য আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার দাবি করে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পানি সংকটের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় অবকাঠামোর দুরবস্থাকে দায়ী করেছে।