ডেস্ক রিপোর্ট: তুরস্কের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টায় ‘অভিযুক্ত’ গুলেন রোববার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রয়টার্স লিখেছে, এরদোয়ানের এক সময়ের মিত্র ছিলেন গুলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে নাটকীয়ভাবে বিরোধ দেখা দেয়। এরদোয়ান তাকে ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য দায়ী করেন, যেখানে বিদ্রোহী সেনারা যুদ্ধবিমান, ট্যাংক এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তুরস্কের ক্ষমতা দখলে নিতে চেয়েছিল। সে সময় লড়াইয়ে প্রায় ২৫০ জন তুর্কি নিহত হয়। আর অভ্যুত্থানও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
এরদোয়ানের জোরালো দাবি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ে থাকা গুলেনই ছিলেন এই সেনা বিদ্রোহের হোতা। গুলেন দীর্ঘ দিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেইনিয়ায় থাকলেও, তুরস্কে তার প্রভাব আছে। ‘হিজমেত’ নামের একটি জনপ্রিয় আন্দোলনের প্রধান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে অবিলম্বে ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে গ্রেফতার করে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন এরদোয়ান।তবে ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা গুলেন তুরস্কের ওই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
২০১৬ সালে বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) ইস্তাম্বুলের দপ্তরেও হানা দেয়।
সেসময় উপকূলের শহর মারমারিসে অবকাশে থাকা এরদোয়ান অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই এক বার্তায় জনগণকে এ অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়েই বিপুল সংখ্যক সমর্থক রাস্তায় নেমে আসে এবং অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। পরের দিন ভোরে আত্মসমর্পণ করে বিদ্রোহী সেনারা।
পরবর্তীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইলদিরিম বলেন, বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে আরও এক হাজার ৪৪০ জন সামরিক-বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
দুই হাজার ৮৩৯ জন বিদ্রোহী সেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন।
দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এমআইটি) প্রধান হাকান ফিদান বলেন, “সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কৌশলগত অভিযান শেষ হয়েছে।”
সমর্থকদের কাছে হোদজায়েফেন্দি বা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত গুলেন ১৯৪১ সালে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় এরজুরুম প্রদেশের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন ইমামের পুত্র গুলেন।
১৯৫৯ সালে, গুলেন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এদির্নে মসজিদের ইমাম হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৬০ এর দশকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইজমিরে একজন প্রচারক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন।

Discussion about this post