ইউএস বেঙ্গল বাংলাদেশ বুরোঃ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যরকম এক আতঙ্কের নাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, বৌদ্ধ মন্দির, মুগদা, সিপাহীবাগ, মানিকনগর, মান্ডা, সায়েদাবাদ, কোনাপাড়া, বসিলা এই এলাকাগুতেই হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। আর তো রয়েছেই শহরের অন্যান্য এলাকার চিত্র। এটার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।কোনো নিয়মকানুন নেই।
তবে খবর নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার নিম্ন এলাকাগুলোয় এই ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানোর ব্যাপারে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। যেমন- গুলশান-বনানী কিংবা বারিধারায় চাইলেই এসব গাড়ি হুট করে নামানো যায় না; কিন্তু যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা কিংবা সিপাহীবাগের মতো এলাকাগুলোতে যে কেউ যখন-তখন নামিয়ে ফেলতে পারে এসব রিকশা। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় আরও যানজট বাড়ছে, বাড়ছে রাস্তায় বিশৃঙ্খলাও। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেন রাস্তায় নামানোই এখন সহজ একটি প্রক্রিয়া।
রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকা, লালবাগ, হাজারীবাগ, আজিমপুরসহ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং উত্তরাতেও ব্যাপক সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের বেপরোয়া চলাচলে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিছু কিছু ঘটনা আলোচনায় আসছে। বাকি অনেক ঘটনা জানতেও পারছে না মানুষ।
সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকাতে রিকশার সংখ্যা কত, এর সঠিক কোনো তথ্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। ডিএসসিসি এলাকায় অবৈধ প্রায় ৪ লাখ রিকশা রয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায়ও অবৈধ রিকশার সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লাখ হবে বলে মনে করছেন ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে ঢাকায় যেসব রিকশা নামানো হচ্ছে, এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যা ব্যাটারিচালিত। শারীরিক কষ্ট লাঘব করতে রিকশাচালকরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এ জন্য রিকশার মালিকরাও রিকশায় ব্যাটারি যুক্ত করছেন।
জানা গেছে, এসব রিকশা থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। যা স্থানীয় থানাসহ রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতা-কর্মীরা ভাগ পেয়ে থাকে।
এদিকে একটা সময় ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো ঢাকার প্রধান সড়কে ওঠানোর বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ নিয়মের কোনো বালাই নেই বললেই চলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো নগরীর প্রধান সড়কে চলার পাশাপাশি তা বিভিন্ন ফ্লাইওভারেও উঠে যাচ্ছে যেনোতেনোভাবে এসব রিকশা চলার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
এদিকে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েছেন। তাদের মতে, এসব গাড়ির কারণে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এটা ইতিবাচক দিক। তবে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা একজন চালককে জানাতে হবে- তার কোন রাস্তায় কীভাবে চলাচল করতে হবে। রাস্তায় চলাচলের একটা নিয়ম-নীতি রয়েছে। তাকে সেই শিক্ষাটা দিতে হবে।
ঢাকা শহরের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন রাস্তার বিষফোড়া। এলাকার ভেতরের রাস্তায় এসব রিকশা চলাচলের কথা থাকলেও এগুলো সব সময় মহাসড়কে উঠে আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায় না রাজনৈতিক কারণেই। কারণ দিনশেষে এ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। যার ভাগ রাস্তার পাতি নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত পেয়ে থাকে।
দেশের অনেক সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলে থাকে ধীরগতির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। অন্যদিকে, দূরপাল্লার পরিবহনগুলো দ্রুত গতির হয়ে থাকে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সরু রাস্তা ও ধীরগতির অবৈধ যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগও।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা এই রিকশার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে এটাই এখন বড় প্রশ্ন? খবর নিয়ে জানা গেছে, ইজিবাইকগুলো রুট পারমিট ছাড়াই রাস্তায় চলাচল করছে। শুধু অভিযান চালিয়ে অবৈধ রিকশার দাপট বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য পরিকল্পনাবিদদের। তাই প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ।

Discussion about this post