Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 10:49 pm

ট্রাম্পের ধাতব শুল্কের পাল্টা জবাব দিলো কানাডা ও ইইউ

ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ধাতব শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্রুত পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে নেওয়া হলেও এটি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে আগে থেকে থাকা শুল্ক পুনর্বহাল করেছে এবং তা শতাধিক পণ্যে সম্প্রসারিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নাট-বোল্ট, বুলডোজারের ব্লেড, সোডা ক্যানের মতো পণ্য। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য আমেরিকার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। তবে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারী, ভোক্তা ও ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা ডেকে আনতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

ইইউ ও কানাডার পাল্টা পদক্ষেপ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ঘোষণা করেছে যে, আগামী মাস থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। যদিও এই শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাবের চেয়ে প্রতীকী মূল্যই বেশি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ভূরাজনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভরা এই বিশ্বে আমাদের অর্থনীতিকে এমন শুল্কের বোঝা চাপানো আমাদের সাধারণ স্বার্থে নয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী কানাডা ২৯.৮ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার মূল্যের পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে। কানাডার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাল্টা শুল্কের তালিকা বেশ বৈচিত্র্যময়। ডেন্টাল ফ্লস থেকে হীরা, বাথরোব থেকে বুরবন পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য এই তালিকায় রয়েছে। তবে জার্মানির কিল ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ইইউর অর্থনীতিতে এই শুল্কের প্রভাব খুবই কম, মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। কারণ, ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের মাত্র একটি ছোট অংশ এই শুল্কের আওতায় পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধের এই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এমন সময়ে যখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার উত্তরসূরি মার্ক কার্নির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার কানাডাকে ‘আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কানাডার জ্বালানি মন্ত্রী জোনাথন উইলকিনসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক অব্যাহত থাকলে কানাডা অ-শুল্ক পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে তেল রফতানি সীমিত করা বা খনিজ পণ্যে রফতানি শুল্ক আরোপ করা।

মার্কিন মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিক্রিয়া

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বেইজিং তার অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো যেমন কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া এই সার্বিক শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, এই পদক্ষেপ আমাদের দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের চেতনার বিরোধী। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন পাল্টা শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফিলিপ বেল বলেছেন, শুল্কের ফাঁকফোকর বন্ধ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও ইস্পাত শিল্পকে চাঙ্গা করবেন, যা আমেরিকা পুনর্নির্মাণের জন্য প্রস্তুত।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে কোম্পানিগুলো বেশ চাপে রয়েছে। ফোর্ড, জেনারেল মোটরস, হাউমেট ও হানিওয়েলের মতো কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করে। তবে বুধবারের শুল্ক বৃদ্ধি আগে থেকেই জানা থাকায় এশিয়া ও ইউরোপের বাজার স্থিতিশীল ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টক ইন্ডেক্স ফিউচার্স বেড়েছে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্প এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে পারে। কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাল্টা পদক্ষেপ এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি কী হবে এবং এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কতটা প্রভাবিত করবে।