ইউ এস বেঙ্গল বাংলাদেশ ব্যুরোঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর। বর্তমানে এই শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যা প্রাই সাড়ে চার কোটির কাছাকাছি। এই শহরের মোট আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার।
বিশ্বের বসবাস অনুপযোগী শহরগুলোর তালিকার মধ্যে ঢাকা অন্যতম একটি শহর, যদিও এই শহরে উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে, তবে চরম অব্যবস্থাপনার কারণে শহরের মানুষের দুর্ভোগ যেন সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই শহরে দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান অসংখ্য মানুষের। ঢাকা শহরের ৫ হাজারের বেশি বস্তিতে অন্তত ৪০ লাখ মানুষের বসবাস।
ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি। ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখ যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ ভাগ। জনসংখ্যার বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ হাজার লোক বাস করে। [[ সুত্র:উইকিপিডিয়া ]]
এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার এমন বেশ কিছু প্রকল্প তৈরি হলেও কার্যত এর প্রভাব এবং সুফল খুব একটা বয়ে আনতে পারেনি জনদুর্ভোগের এই শহরে। তবে মেট্রোরেল শহরের একটা অংশের মানুষের জন্য চলাচলের সুবিধায় ভূমিকা রাখছে।
বিগত বছরগুলোতে রাইড শেয়ারের অ্যাপ পাঠাও এবং উবারে রাজধানী ঢাকাতে মোটরসাইকেল যুক্ত করায় দুর্বিষহ যানজট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা বেকার সমস্যার সমাধানে একমাত্র সহজ পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাজধানী শহরের বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ। এ সকল অটোরিক্সার ফিটনেস ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, তাছাড়াও যে কেউ হয়ে উঠছেন চালক ! অদক্ষ এসব চালক লেন না মেনে এ সকল যানবাহন পরিচালনা করে সৃষ্টি করছেন আরো যানজটের। মোটর বাইক নিয়ে ঢাকার বাইরের বেকার যুবকরা প্রতিনিয়ত ঢুকে পড়ছেন ঢাকা শহরে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরের তালিকায় এখন ঢাকা শীর্ষে। মেট্রোরেল, ফুটওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ যাতায়াতের সুবিধার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সুষ্ঠু এবং যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে যানজট না কমে উলটো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মহানগরী শুধু আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেই বিপর্যস্ত করছে না, অর্থনৈতিক দিক থেকেও বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রেণিবৈষম্য।
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বেশিরভাগ ফুটপাত গুলো চলে গেছে হকারদের দখলে, অবৈধভাবে ফুটপাত দখল, গাড়ি-ট্রাক-প্রাইভেট গাড়িগুলোর যত্রতত্র পার্কিং, জায়গায় জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা, গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বিরামহীন প্রতিযোগিতা, গাড়িচালকদের অদক্ষতা, চালকদের সঠিক লেন না মানা, ট্রাফিক আইন ঠিকমতো না মানা এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় রেলক্রসিং থাকায় বারবার ট্রেন আসা-যাওয়া করতে যানবাহন আটকে থাকা ইত্যাদি যানজট বৃদ্ধির কারণ। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এছাড়া বিগত দিন গুলিতে সীমাহীন ভাবে বেড়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফার্মগেট ও বিজয় সরণির বাইরে ১৫টি এলাকাকে যানজটের হটস্পট (কেন্দ্র) হিসেবে গণ্য করেন। যার মধ্যে রয়েছে কুড়িল বিশ্বরোড, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা, পল্টন, গুলিস্তান, সদরঘাট, শাহবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব ও মিরপুর-১০ গোলচত্বর।
অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলে জায়গা সংকুচিত হচ্ছে, ফলে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। ভবন নির্মাণের সময় অনেক নালা-নর্দমা ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে ড্রেনেজ সিস্টেম, বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। সচেতনতার অভাবে মানুষ নালা-নর্দমা ও খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রভাব ফেলছে জনজীবন এর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ির সামনের রাস্তায় ব্যাগভর্তি প্যালিথিনে গৃহস্থালির আবর্জনা পড়ে থাকার ফলে সেটা থেকে দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ময়লা ফেলার নির্ধারিত জায়গা ও পর্যাপ্ত আঁস্তাকুড়ের (ডাস্টবিন) যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা না থাকার জন্য যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ জমে ছোটখাটো একটা আবর্জনার টিলা তৈরি হয়ে যায়। নিয়মিত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়। এসব ময়লার স্তূপ থেকে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস ও লিচেট (ময়লা থেকে নিষ্কাশিত তরল) সহজেই পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি রোগজীবাণু বহনকারী বিভিন্ন কীটপতঙ্গকে আকর্ষণ করে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়াও বর্জ্যরে দূষণ থেকে পেটের পীড়া, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, আলসার, গ্যাস্ট্রিক, এমনকি লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়ার মতো কঠিন অসুস্থতার শিকার হয় মানুষ।
এছাড়া বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাস্তাগুলো জলমগ্ন হয়ে পরে এবং প্রধান সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। মিরপুর ১০, মিরপুর ১১, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, পুরান ঢাকা, বংশাল রোড, বিজয় সরণি, ইস্কাটন, ফার্মগেট, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। শহরের পার্ক গুলোতে অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
বিশ্বে শব্দদূষণে শীর্ষে ঢাকার অবস্থান, আগে রাজধানীতে গড়ে ১২ ঘণ্টা সময় ধরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দদূষণ হতো। এখন তা ১৪ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গেছে। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। ঢাকায় শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যেসব উৎসের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো সাধারণত যানবাহন চলাচলের শব্দ (হর্ন, ইঞ্জিন, চাকার ঘর্ষণ ও কম্পনের শব্দ), নির্মাণকাজ যেমন ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন ও টাইলস কাটার মেশিন থেকে শব্দ, ভবন ভাঙার শব্দ, কলকারখানার শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, সামাজিক নানা অনুষ্ঠানের মাইকিংয়ের শব্দ। বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে ঢাকা চতুর্থ / মে ২০২৪, সর্বশেষ ২য় স্থানে অবস্থান। একটু শান্তিতে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য যারা পার্কে আসতো তারাও এখন পার্কে আসতে চায় না পরিবেশগত কারণে।
ঢাকা একদিক থেকে যেমন ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে, তেমনি হয়ে উঠছে প্রায় সব দুর্যোগের কেন্দ্রস্থল।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post