ডেস্ক রিপোর্ট: দিনে দিনে নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। বেসামরিকদের লক্ষ্য করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে হত্যাযজ্ঞ। গাজার বাড়িঘর থেকে শুরু করে শরণার্থী শিবির সবত্রই চলছে নারকীয় তাণ্ডব।
বুধবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ভোর থেকে ছিটমহলের বেশ কয়েকটি এলাকায় কমপক্ষে ২৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজা শহর এবং উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে নতুন করে এ হামলা হয়েছে। তীব্র বোমা হামলার পর জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। আলজাজিরা, এএফপি।
শুধু গুলিই নয়, আবাসন আল-কাবিরা শহরের নিকটবর্তী খান ইউনিসে কামান হামলাও চালানো হয়েছে। মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের পাশাপাশি বুরেজ শিবিরেও আর্টিলারি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার সকালেও উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তুফাহ পাড়ায় আল-নাফাক স্ট্রিটে হাসুনা পরিবারের কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়াও আল-শাফ এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়।
বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপে ফিলিস্তিনি তরুণী
উদ্ধারকর্মীরা গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির পাথরের নিচ থেকে একজন তরুণীকে উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে- সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারীরা টর্চলাইটের নিচে কাজ করছেন। হাতুড়ি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে ইট সরিয়ে ফেলছে। চাপা পড়া তরুণীটি তার মায়ের জন্য কাঁদছিল। তার কপালে একটি বড় দাগ পড়েছিল। তার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
২০০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরাইলি পুলিশ অফিসারের যুদ্ধ বন্ধের দাবি
২০০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরাইলি পুলিশ কর্মকর্তা গাজায় বন্দিদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অনেকেই পুলিশ প্রধান এবং জেলা কমান্ডার। চিঠিতে ইসরাইল প্রিজন সার্ভিসের সাবেক প্রধান আহরন ফ্রাঙ্কো এবং কমান্ডার ড্যানি এলগার্টও স্বাক্ষর করেছিলেন। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বিমানবাহিনীর থেকে আসা খোলা চিঠিকে সমর্থন করেন।
গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করবে না
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে ‘ইসরাইলের নীতি পরিষ্কার এবং গাজায় কোনো মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়া হবে না। এটি হামাসকে চাপ দেওয়ার একটি হাতিয়ার।’ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় সব ধরনের সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই সেখানে বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাটজ আরও জানিয়েছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ সৈন্য থাকবে। কাটজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী ‘গাজায় যে কোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পরিস্থিতিতে শত্রু এবং [ইসরাইলি] সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বাফার হিসাবে নিরাপত্তা অঞ্চলে থাকবে- যেমন লেবানন এবং সিরিয়ায়।’
গাজা ফিলিস্তিনি ও তাদের সাহায্যকারীদের জন্য একটি ‘গণকবর’: এমএসএফ
ফিলিস্তিনিদের জীবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়াও মানবিক কর্মীদের নিরাপত্তারও নিশ্চয়তা নেই এলাকাটিতে- এমনটাই সতর্ক করেছেন সাহায্যকারী সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। এমএসএফের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরোল বলেন, ‘গাজাকে ফিলিস্তিনিদের এবং যারা তাদের সহায়তায় আসছেন তাদের গণকবরে পরিণত করা হয়েছে। আমরা বাস্তব সময়ে গাজার সমগ্র জনসংখ্যার ধ্বংস এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি প্রত্যক্ষ করছি’।
গাজার অভ্যন্তরে নানা চ্যালেঞ্জ
মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহতে তার ফিল্ড হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ ছাড়াও আল-আকসা এবং নাসের হাসপাতালের কম্পাউন্ডের কাছেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। ১৮ মার্চ থেকে উত্তর গাজায় এমএসএফ মোবাইল ক্লিনিকগুলো স্থগিত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও দক্ষিণে রাফাহতে শাবোরা ক্লিনিকে সেবা দিতে পারেনি। গাজায় পূর্ণ অবরোধের ফলে খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসার মজুত শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, অ্যান্টিবায়োটিক এবং জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য ওষুধের অভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ইসরাইল গাজায় ‘মানবতার ওপর ধ্বংস’ চালাচ্ছে
ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে কাজ করা দ্বৈত নাগরিকসহ দশজন ব্রিটিশ নাগরিককে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এবং ইউকে-ভিত্তিক পাবলিক ইন্টারেস্ট ল সেন্টার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত সপ্তাহে মেট্রোপলিটন পুলিশের যুদ্ধাপরাধ ইউনিটের কাছে ২৪০-পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দিয়েছে ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস। সেই প্রতিবেদন অনুসারে তাদের ‘হত্যা, বাস্তুচ্যুতি, বেসামরিক নাগরিকদের আক্রমণ এবং নির্বাসন’র মতো কাজে জড়িত ইসরাইল।
মার্কিন-ইসরাইলি জিম্মির সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’
গাজায় একজন ইসরাইলি-মার্কিন জিম্মিকে আটকে রাখা দলের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে হামাস। যেখানে ওই জিম্মিকে আটকে রাখা হয়, সেই এলাকায় ইসরাইলি হামলার পর তাদের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে যায় বলে জানায় ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস।
এর আগে ২১ বছর বয়সি সৈনিক এডান আলেকজান্ডারকে একটি ভিডিওতে দেখা যায়। ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল ওই দলটি। গত সপ্তাহে উত্থাপিত ৪৫ দিনের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রথম দিনেই তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইসরাইল আহ্বান জানিয়েছিল হামাসকে। কিন্তু হামাস ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় আনা হয়। যার মধ্যে ৫৯ জন গাজায় ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া গাজায় জিম্মিদের মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক। তাদের মধ্যে আলেকজান্ডারই একমাত্র জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও আঘাত পাবে হামাস: হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর
গাজা উপত্যকায় বিরল সফর করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার এ সফরে তিনি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় গাজার সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসকে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি উত্তর গাজা সফরে যান, যেখানে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সেনাদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে আরও আঘাত করা হবে। গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতানিয়াহু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি পোস্ট সেনাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খামেনি আবারও ইসরাইল ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময়ও সেই হুমকি দিয়েছেন।

Discussion about this post