ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরাইল সমর্থিত হামাসবিরোধী নতুন জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে গাজায়। গত ২ মাসে ইসরাইলের আর্মি রেডিও থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কান ব্রডকাস্টারে (টেলিভিশন ও রেডিও) দেওয়া সাক্ষাৎকারের মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘পপুলার ফোর্সেস’ নামের এই জঙ্গিগোষ্ঠী।
প্রায় ১০০ সদস্যের এই গোষ্টীর নেতৃত্বে রয়েছে ‘ইসরাইলের এজেন্ট’ নামে ধিকৃত ইয়াসির আবু শাবাব। রাফাহ শহরের তারাবিন বেদুঈন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শাবাব মাদক পাচারকারী ও ইসলামিক ষ্টেটের সঙ্গে জড়িত বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
পৈতৃক পরিচিতির চেয়ে গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনের সামাজিক মাধ্যমে শাবাব ‘বিশ্বাস ঘাতক ’ এবং ‘ইসরাইল এজেন্ট’ নামেই বেশি পরিচিত।
৭ অক্টোবর (২০২৩ ) হামাস-ইসরাইল সংঘাতের সময় মাদক পাচারের অভিযোগে গাজার হামাস পরিচালিত একটি কারাগারে বন্দী ছিলেন শাবাব। সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই ফিলিস্তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি।
তবে তার কারামুক্তি প্রক্রিয়াটি এখনও অষ্পষ্ট বলে ১০ জুনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে গার্ডিয়ান। মুক্তির পর বেশ কিছুদিন ‘অদৃশ্য’ হয়ে যান শাবাব। হামাস বা স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউই তাকে ট্রেস করতে পারেননি। নিজে ‘গায়েব’ থাকলেও যুদ্ধচলাকালীন এই দীর্ঘ এই সময়ে থেমে থাকেনি তার দলের লুটপাট-মাদক দৌরাত্ম।
জুনের প্রথম সপ্তাহে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে গাজায় নতুন করে তার পুনুরুত্থান ঘটে শাবাবের। ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী ওই সপ্তাহেই বলে , গাজায় একটি গোষ্ঠীকে তারা সশস্ত্র করা শুরু করেছে ।
৬ জুন এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেই ‘ধোয়াশা’ ইঙ্গিতই দিনের আলোর মত পরিস্কার করে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেজ্ঞামিন নেতানিয়াহু।
বলেন , ‘নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পরামর্শে গাজায় হামাস বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে সক্রিয় করেছে ইসরাইল সরকার। এতে খারাপ কী? শুধুই ভালো। এতে ইসরাইল সেনাদের জীবন বাঁচবে’। নিউইয়র্ক টামস।
গাজায় ইসরাইলের ব্রিটিশ ঔপোনিবেশ শাসনের এই কুখ্যাত ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলস ’ নীতির সবচেয়ে বিষ্ময়কর দিকটি হলো- নিজেদের স্বার্থে সৃষ্ট এই গোষ্ঠীর গায়ে আবার নিজেরাই বসিয়ে দিয়েছে ‘জঙ্গি’ তকমা।
গাজায় ইসরাইল স্বপ্নপূরনের নয়া এই খলনায়ককে অনেক আগে থেকেই দুবৃত্ত হিসাবেই জানে। যুদ্ধকালীন এই বিপর্যস্ত সময়ে গাজাবাসী সাহায্যার্থে আসা ত্রানরে লরিগুলো নিয়মিতভাবে লুট করেছে শাবাব গোষ্ঠী। শুধু হামাস নয়; গাজার পরিবহন কোম্পানির মালিক, ট্রাক চালক এবং আন্তর্জাতিক মানবিক কর্মকর্তারাও তার বিরুদ্ধে আটার বস্তা ভর্তি ট্রাক লুটের অবিযোগ এনেছে বারবার।
গত বছর গাজায় অবস্থানরত জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জর্জিওস পেট্রোপোলোস তাকে “পূর্ব রাফাহের স্বঘোষিত ক্ষমতার দালাল” বলে অভিহিত করেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেও তা স্বীকার করেন জোর গলায় ।
‘আমরা ট্রাক নিচ্ছি যাতে আমরা খেতে পারি, বিক্রি করার জন্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তার পরিবার এবং প্রতিবেশীদের খাওয়াচ্ছেন। প্রত্যেক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি সাহায্য নিচ্ছে।’ হামাসের আনা বিপুল ট্রাক লুটের অভিযোগ মঅবশ্য অস্বিকার করে বলেন , মাত্র অর্ধ ডজন ট্রাক লুট করেছি।
রোববার কান ব্রডকাষ্টারের নতুন সাক্ষাৎকারে বলেন , হামাসের বিরুদ্ধে একটি গৃহযুদ্ধ চলছে, এটি থামানো যাবে না। তিনি দাবি করেন, তার নেতৃত্বাধীন সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত নন।
গত মাসে ইসরাইলের আর্মি রেডিওকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে আবু শাবাব ইসরাইলের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা নিশ্চিত করেন।
সেই সময় তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মানবিক সহায়তা বিতরণের মতো বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে সহযোগিতা করতে তিনি আপত্তি করবেন না।
আরও বলেন, ‘আমরা হামাসের অত্যাচার ও নির্যাতন নিজেদের গায়ে টের পেয়েছি। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যায় ও দুর্নীতি দূর করার চিন্তাভাবনা গ্রহণ করা যেকোনো বৈধ শক্তিকে আমরা সমর্থন করি।’
আবু শাবাব জানান, তাঁর দল ‘পপুলার ফোর্সেস’ বিভিন্ন উৎস থেকে লজিস্টিক ও আর্থিক সহায়তা পায়। তবে তিনি নির্দিষ্টভাবে কোনো উৎসের নাম বলেননি। তিনি আরও দাবি করেন, হামাস ক্ষমতা ছাড়ার পর গাজায় নিয়ন্ত্রণ নেবে ‘পপুলার ফোর্সেস।’
কান তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, হামাস এটা জানে ও বোঝে যে হামাস ধ্বংস হওয়ার পর গাজায় উত্তরাধিকারী হবে পপুলার ফোর্সেস। এ ছাড়া আবু শাবাব বলেন, তাঁর দল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
তার ভাষায়, ‘কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সমন্বয় রয়েছে, কিন্তু কোনো সামরিক সমন্বয় নেই। পিএ আমাদের সংগঠনকে অস্ত্র বা সহায়তা দেয় না; সমন্বয় শুধু প্রশাসনিক পর্যায়ে।’
এই সাক্ষাৎকারের কয়েক দিন আগে হামাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়াসির আবু শাবাব ও তার গোষ্ঠীর সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য ১০ দিনের আলটিমেটাম দেয়। আত্মসমর্পণ না করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দেয় তারা।

Discussion about this post