ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যে গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুত করার ইঙ্গিতকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছে মিশর ও কাতার। নেতানিয়াহু রাফা সীমান্ত দিয়ে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন, যা মিশর ‘রেড লাইন’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে কাতার একে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ওপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নীতির সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। খবর আল জাজিরার।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য আসলে ‘অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ানো এবং অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টা।’ ইসরায়েলি টেলিগ্রাম চ্যানেল আবু আলি এক্সপ্রেস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, ‘গাজা পুনর্গঠনের জন্য একাধিক পরিকল্পনা আছে’ এবং ‘জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক গাজা ছেড়ে যেতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি গণ-বহিষ্কার নয়। আমি চাইলে রাফা তাদের জন্য খুলে দিতে পারি, কিন্তু মিশর সেটি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেবে।’
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বা জবরদস্তিমূলকভাবে বাস্তুচ্যুত করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল। বিবৃতিতে মিশর জোর দিয়ে জানায়, তারা কখনোই এ ধরনের কাজে জড়িত হবে না কিংবা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে না। এটিকে তারা ‘অতিক্রম করা যাবে না এমন রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নেতানিয়াহুর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা আখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘দখলদারিত্বের চাপিয়ে দেওয়া সম্মিলিত শাস্তির নীতি কখনোই ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করতে বা তাদের বৈধ অধিকার কেড়ে নিতে সফল হবে না।’ কাতার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েলের ‘উগ্র ও উস্কানিমূলক নীতির’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে, যাতে এই অঞ্চলের সহিংসতার চক্র এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব প্রতিহত করা যায়।
এই প্রতিক্রিয়াগুলো এসেছে এমন সময়ে, যখন মিশর ও কাতার হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা চালিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আম্মান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হামদাহ সালহুত বলেন, নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য ‘অত্যন্ত বিতর্কিত,’ কারণ ইসরায়েলি সরকার প্রকাশ্যে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতে চায়। তিনি যোগ করেন, ‘কাতার ও মিশরের নিন্দা আসলে ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, এই পরিকল্পনা তাদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। যুদ্ধ ইসরায়েলই শুরু করেছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ধারাবাহিক অপরাধ চালাচ্ছে এবং রাফা সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। ফলে গাজার জনগণ এখন আটকা পড়েছে, অন্য কোনো কারণে নয়।’

Discussion about this post