ডেস্ক রিপোর্ট: মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তার শততম জন্মদিনে গণতন্ত্র ও আধুনিক সভ্যতা নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন। জন্মদিন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র যেমন সঠিকভাবে কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাহাথির মনে করেন গণতন্ত্র নিখুঁত নয় এবং একে সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে তা জাতির জন্য উপকার বয়ে আনে না।
মাহাথির বলেন, ‘গণতন্ত্রে শুধু দুইটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে—এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চায়, ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, ফলে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই বহুক্ষেত্রেই গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’
গাজা পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন মাহাথির
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়েও বক্তব্য দেন মাহাথির। গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করতে খাদ্য সংকট ও যুদ্ধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট মদদ রয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতা যেভাবে এই অন্যায়কে নীরবভাবে মেনে নিচ্ছে, তা তাদের নৈতিক পতনের প্রতিচ্ছবি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আজ মানবাধিকার বা মানুষের জীবন নিয়ে আর ভাবে না। তারা বিশ্ব নেতৃত্বের উপযুক্ততা হারিয়েছে।’
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত জীবন
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। চিকিৎসাবিদ্যা পেশায় থাকা অবস্থায় মাত্র ২১ বছর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি টানা ২২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার শাসনামলেই মালয়েশিয়া প্রবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যায়। ২০১৮ সালে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন এবং ৯২ বছর বয়সে বিশ্বের প্রবীণতম সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
নিজের দীর্ঘ ও সক্রিয় জীবনের রহস্য নিয়ে মাহাথির বলেন, ‘অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা, নিয়মিত শরীরচর্চা, পড়া, লেখা, বিতর্ক ও মানসিকভাবে সক্রিয় থাকা—এই অভ্যাসগুলো আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।’ স্ত্রী সিতি হাসমাহকে (৯৮) তিনি আজীবনের প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানান।
মুসলিম বিশ্ব ও মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা
ভবিষ্যতের মালয়েশিয়া সম্পর্কে আশাবাদী হলেও তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ‘জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে, যেন তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে,’ বলেন মাহাথির।
মুসলিম বিশ্বের ঐক্যহীনতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ওআইসি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই সংস্থায় একটি সদস্য দেশের আপত্তিতে পুরো সিদ্ধান্ত আটকে যায়। ফিলিস্তিন ইস্যুতেও একমত হতে পারে না মুসলিম বিশ্ব।’
নিজের রাজনৈতিক জীবন ও অর্জন সম্পর্কে মাহাথির বলেন, ‘আমি নিজেকে মূল্যায়ন করতে চাই না। ইতিহাসই একদিন বলবে, আমি কী করেছি। তবে নিজের দেশের জন্য কাজ করতে পারাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ও তৃপ্তি।’