ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গত ৭২ ঘণ্টা ধরে ভারী ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন নদীর জলের স্তর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাজ্যের অনেক জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গোমতী ও ঊনকোটি জেলা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রিপুরার বাংলাদেশ ঘেঁষা খোয়াই জেলার প্রশাসন সর্বোচ্চ ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে।
খোয়াই নদের পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩১ বছর পর মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ল্যাপ গেট’-এর তিনটির মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে বাংলাদেশের কিছু অংশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় এই গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর মানিক সাহা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করে রাজ্যে দ্রুত অতিরিক্ত এনডিআরএফ বাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। এনডিআরএফ’র একটি দল বৃহস্পতিবার ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরে এসে পৌঁছার কথা। আরও ৪টি এনডিআরএফ বাহিনী বিমানে করে আনা হচ্ছে।
রাজ্যের ধলাই, খোয়াই, দক্ষিণ ত্রিপুরা, পশ্চিম ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা এবং ঊনকোটি জেলার নদীগুলির জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠেছে। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এই শিবিরগুলোতে ৩২ হাজার ৭৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারী ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে গত ১৯ আগস্ট থেকে সারা রাজ্যে ১,৯০০টিরও বেশী স্থানে ভূমিধস ঘটেছে। এতে বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রাথমিক রিপোর্টে বাড়ি, গবাদি পশু, পরিকাঠামো ও কৃষিজাত ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ জন ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আগামীকালও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাছাড়া ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর আজ সারা রাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। সেই অনুসারে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সতর্ক থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের রিপোর্টে জানা গেছে, ভারী বর্ষণে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২৬টি অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা জেলার অধীন ধর্মনগরে ১১০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৮টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। ঊনকোটি জেলার অধীন কৈলাসহর এবং কুমারঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খোয়াই জেলায় তেলিয়ামুড়া মহকুমায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা চারদিনের বৃষ্টিতে ধলাই জেলার কমলপুর, আমবাসা, লংতরাই ভ্যালি এবং গন্ডাছড়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়, জম্পুইজলা এবং সোনামুড়ার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া মহকুমা, সাব্রুম এবং শান্তিরবাজারে রাস্তায় বড় ভূমিধস হয়েছে। গাছ রাস্তায় পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গোমতী জেলায় অধীন উদয়পুর, করবুক এবং অমরপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।