ডেস্ক রিপোর্ট: টিউলিপের সঙ্গে তাঁর খালার (শেখ হাসিনা) সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দাবি করা হয়েছে যে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা দেশ থেকে কোটি কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন। আর এর মধ্য থেকে কিছু অর্থ বিদেশে সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।টিউলিপ সিদ্দিক সাধারণ কোনো রাজনীতিবিদ নন। তাঁর খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কোটি কোটি পাউন্ড বিদেশে পাচার করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ডিসেম্বরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে। ওই তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও এসেছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মূলে রয়েছে তিনি এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে একাধিক সম্পত্তি পেয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁর খালার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৩ সালে মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর খালার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বৈঠকের ছবিতে টিউলিপকে দেখা যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে টিউলিপ মধ্যস্থতা করেছিলেন কি না, তা এখন তদন্ত করছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, এ প্রকল্প থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা অর্থ আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছেন।
লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিককে একটি ফ্ল্যাট বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন উপহার পেয়েছিলেন। হ্যাম্পস্টেড এলাকার ওই ফ্ল্যাটে একসময় টিউলিপ নিজেও বসবাস করতেন। পরে ফিঞ্চলে এলাকায় ২১ লাখ পাউন্ডের যেই বাড়িতে টিউলিপ থাকতেন, সেটাও তাঁর খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর মালিকানায় ছিল।
কিংস ক্রস এলাকায় অবস্থিত ফ্ল্যাট নিয়ে তদন্তে মনোযোগ দিয়েছিলেন স্যার লাউরি ম্যাগনাস। টিউলিপের দাবি, ওই ফ্ল্যাট তাঁর মা-বাবা তাঁকে দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, একজন আবাসন ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন এক ব্যক্তি ওই ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করেছিলেন।
দুই শয়নকক্ষের ওই ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যক্তি। পরবর্তী সময়ে সেটি টিউলিপকে দেওয়া হয়।
টিউলিপ দাবি করেন, ওই সম্পত্তি তাঁর মা–বাবা তাঁকে দিয়েছিলেন। তবে মোতালিফের সঙ্গে লেনদেনের বিবরণ প্রকাশ পাওয়ায় মন্ত্রী হওয়ার পর পুরোনো নথি সংশোধন করতে বাধ্য হন তিনি।
লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

Discussion about this post