ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং এর মালিক রুপার্ট মারডকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৫৪ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন।
শুক্রবার ফ্লোরিডার মিয়ামির একটি ফেডারেল কোর্টে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার দাবি অনুযায়ী, ২০০৩ সালের একটি জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তায় ট্রাম্পের নাম ছিল, যেখানে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ একটি আঁকা ছবি এবং ‘তাদের ভাগ করা গোপন তথ্য’ উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে ট্রাম্পের আর্থিক ও সামাজিকভাবে ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ।
মামলায় মারডক, ডাও জোন্স, নিউজ কর্প এবং প্রতিষ্ঠানটির সিইও রবার্ট থমসন এবং জার্নালের দুই প্রতিবেদককে আসামি করা হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিটের সেই প্রতিবেদনে একটি চামড়ার বাঁধাই করা জন্মদিনের বইয়ে ট্রাম্পের ওই বার্তাটি ছিল, যেখানে টাইপ করা কয়েকটি লাইনের চারপাশে একটি নগ্ন নারীর হাতে আঁকা ছবি ছিল। শেষ লাইনে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন – আর প্রতিটি দিন হোক আরেকটি সুন্দর গোপন রহস্য’, নিচে লেখা ছিল ‘ডোনাল্ড’।
এপস্টেইনের মৃত্যু ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
দুর্নীতি ও যৌন অপরাধে দণ্ডিত জেফরি এপস্টেইন ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের এক কারাগারে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যু ঘিরে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে, যার অনেকগুলো ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, ধনীদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক গোপন রাখতে সরকার তাকে হত্যা করেছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, ২০০৬ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে প্রথমবার অভিযোগ ওঠার আগেই তিনি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন এবং আগেই হুঁশিয়ার করেছিলেন যে তিনি মামলা করবেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন এই মিথ্যা, দূষিত, মানহানিকর ‘ফেইক নিউজ’ আর্টিকেলটি প্রকাশ করা সকলের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী মামলা করেছি।’
‘দশ বিলিয়ন ডলার’ অতিরঞ্জিত?
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যে ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যেকোনো মানহানির মামলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিমাণ। আগের বড় মানহানির মামলাগুলোর মধ্যে আছে- ষড়যন্ত্রবাদী অ্যালেক্স জোন্সের বিরুদ্ধে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের রায়; ফক্স নিউজের বিরুদ্ধে ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমের ৭৮৭.৫ মিলিয়ন ডলারের মামলা।
একজন আইনজীবী বলেন, ‘দশ বিলিয়ন ডলার একেবারেই অতিরঞ্জিত দাবি। এটি হবে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানহানির রায়।’
হোয়াইট হাউসের অস্বস্তি ও এপস্টেইনের কেস
এপস্টেইন সংক্রান্ত বিষয়টি আবার হোয়াইট হাউসে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এ মাসে মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চলা ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রমাণিত হয়নি। ৭ জুলাই প্রকাশিত এক স্মারকে বলা হয়, এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছিলেন এবং তার কাছে কোনো ‘গ্রাহকের তালিকা’ বা চাঞ্চল্যকর ব্ল্যাকমেইল প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবুও জনমতের চাপে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানান, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আদালতে আবেদন করতে বলেছেন, যাতে এপস্টেইন সংক্রান্ত গ্র্যান্ড জুরি সাক্ষ্য প্রকাশ করা যায়।
পরদিন শুক্রবার সরকার নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টে এপস্টেইন এবং তার সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের মামলার গ্র্যান্ড জুরি সাক্ষ্য প্রকাশের আবেদন করে।
ম্যাক্সওয়েল ২০২১ সালে কিশোরীদের যৌন নিপীড়নে সহায়তার অভিযোগে পাঁচটি ফেডারেল মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২০ বছরের কারাদণ্ড পান। তিনি বর্তমানে তার সাজা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন।
ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সম্পর্ক
ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের ১৯৯০ এবং ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে বহু সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে ছবি রয়েছে। তারা ফ্লোরিডার পাম বিচ এলাকায় প্রতিবেশীও ছিলেন। ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি জেফকে ১৫ বছর ধরে চিনি। দুর্দান্ত লোক। তার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। সে সুন্দরী নারীদের খুব পছন্দ করে, এমন কথাও আছে—তাদের অনেকেই তরুণী।’
তবে ২০১৯ সালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়েছিল। আমি ১৫ বছর তার সঙ্গে কথা বলিনি। আমি তার ভক্ত ছিলাম না, এটা বলতে পারি।’
এখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ঘিরে এ ১০ বিলিয়ন ডলারের মামলার রায় কী হয়- তা শুধু ট্রাম্প নয়, সমগ্র মার্কিন রাজনীতি ও সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

Discussion about this post