ডেস্ক রিপোর্ট: গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক লুট হওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে অন্তত ৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। শুক্রবার দখলদার বাহিনীর এক বিমান হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস বলছে, গাজায় টানা ১১ সপ্তাহ ইসরাইলি অবরোধের পর ত্রাণ সরবরাহ শুরু হলেও তাতে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। যা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজার কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে ১০৭টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকে ছিল আটা, অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ। তবে শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এই ত্রাণ তেমনভাবে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি একটি সাহায্য সংস্থার জোট জানিয়েছে, গত সোমবার অবরোধ আংশিক শিথিল করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে খান ইউনিস শহরের কাছে ইহুদিবাদি সশস্ত্র দলগুলোর লুটপাটের কারণে ত্রাণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘যেসব শিশু ও পরিবার চরম ক্ষুধায় ভুগছে, তাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য লুট করে নেওয়া হয়েছে’। একইসঙ্গে ত্রাণ পাহারাদারদের ওপর ইসরাইলি বিমান হামলার নিন্দাও জানানো হয়।
এদিকে হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় ত্রাণ রক্ষাকারী দলটির ৬ সদস্য নিহত হয়েছে। যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ফিলিস্তিনি সাহায্য সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজায় ঢোকা ত্রাণ এখনো পর্যাপ্ত নয় এবং তাতে কেবল সীমিত পণ্যসামগ্রী রয়েছে।
একইসঙ্গে, গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে ইসরাইলের সম্মতি দেওয়াটা ‘একটি প্রতারণামূলক কৌশল’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এর উদ্দেশ্য মূলত আন্তর্জাতিক চাপ এড়ানো।
এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) অভিযোগ করে বলেছে, তাদের সহায়তায় পাঠানো ১৫টি আটা বহনকারী ট্রাক লুট হয়েছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ক্ষুধা, হতাশা এবং ভবিষ্যতে খাবার আসবে কি না— এই দুশ্চিন্তা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে’।
আরও জানিয়েছে, ‘WFP আগেই জানিয়েছিল, গাজায় ২১ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে বিপর্যয় এড়ানো যাবে না’।
এ বিষয়ে ইসরাইল বলছে, তারা প্রায় ৩০০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা বাস্তব চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
রয়টার্স জানিয়েছে, অনেক ট্রাক কেরেম শালোম সীমান্তে আটকে আছে, সেগুলো এখনো গন্তব্যে পৌঁছায়নি। গাজায় দ্রুত সহায়তা পৌঁছানোর দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
জার্মান সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, এই সহায়তা ‘অনেক দেরিতে, অল্প পরিমাণে এবং খুব ধীরগতিতে’ আসছে এবং এগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে।
দখলদার ইসরাইল চলতি বছরে মার্চের শুরুতে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। তখন তারা হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিকদের জন্য পাঠানো সহায়তা চুরির অভিযোগ তোলে। যার ফলে ওই সময় কার্যকর থাকা দুই মাসের অস্ত্রবিরতি ভেঙে যায়। কারণ ইসরাইল নতুন চুক্তি করতে অনীহা প্রকাশ করে।
তবে হামাস ইসরাইলের ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের অনেক যোদ্ধা ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে লুটপাটকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে।
এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় রাতভর বিমান হামলা চালিয়ে ৭৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, যার মধ্যে ছিল অস্ত্রাগার ও রকেট লঞ্চার।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এসব হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এ নিয়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৫৩,৪২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজা জুড়ে অপুষ্টির চিহ্ন ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে।

Discussion about this post