ডেস্ক রিপোর্ট: গাজা সিটির তুলনামূলক অক্ষত নাসের এলাকায় বৃহস্পতিবার নতুন করে দ্বিধায় পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লিফলেট বিলি করে সতর্ক করেছে, পশ্চিমাঞ্চল শিগগির তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। এতে বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে এখানে থাকবেন, নাকি আবারও পালাবেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গাজার লাখো মানুষকে শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। তবে দক্ষিণে ও অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য ও জায়গার অভাবে সরে যাওয়া মানেই নতুন ভোগান্তি। আবু আহমেদ নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে না বিশ্রাম আছে, না আছে শান্তি, এমনকি ঘুমও নেই। আমাদের জীবন যুদ্ধের চারপাশে ঘুরছে। আজ এই এলাকা ছাড়তে হয়, কাল অন্য এলাকা। আমরা আর পারছি না।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারা গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটির বিভিন্ন স্থানে ১১ জন, বিচ শরণার্থী শিবিরে একসঙ্গে ৫ জন এবং দক্ষিণে রাফাহর কাছে খাদ্যের খোঁজে থাকা ২ জন প্রাণ হারান।
নাসের এলাকায় যুদ্ধের শুরু থেকেই সেনাদের উপস্থিতি ছিল। বুধবার রাতে ছড়ানো লিফলেটের পর আশঙ্কা বাড়ছে যে শিগগিরই ট্যাংক নিয়ে পুরো এলাকা দখলে এগোবে ইসরায়েলি সেনারা। এর আগে গত সপ্তাহে তারা গাজা সিটির শুজাইয়া, জেইতুন ও তুফাহ এলাকায় অভিযান চালিয়েছে এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শেখ রাদওয়ান এলাকায় ট্যাংক প্রবেশ করেছিল। ইসরায়েল বলছে, তারা ইতোমধ্যে শহরের ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
বুধবার ইসরায়েল জানায়, তারা গাজায় ৩৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো, ক্যামেরা, গোয়েন্দা ঘাঁটি, স্নাইপার অবস্থান, ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র ও কমান্ড সেন্টার’ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করে সেনাবাহিনী। তারা আরও বলেছে, আগামী দিনগুলোতে হামাসের সক্ষমতা ধ্বংসে আরও তীব্র ও লক্ষ্যভিত্তিক হামলা চালানো হবে।
এরই মধ্যে গাজার পরিবারগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত এলাকাগুলো থেকে শহরের কেন্দ্র কিংবা সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে, কেউ কেউ দক্ষিণমুখে সরে যাচ্ছেন। তবে অনেকেই রয়ে গেছেন অর্থাভাব ও যাতায়াতের অসুবিধার কারণে। আহমেদ আল-দাইয়েহ নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত টাকা নেই দক্ষিণে যেতে। আমাদের কোনও উপায় নেই। বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহত এক বন্ধুর জানাজায় তিনি এসব বলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু। প্রতিশোধমূলক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকা।
খাদ্য সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ৭ জন, এর মধ্যে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে অন্তত ৪১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪২ শিশু।
ইসরায়েল বলছে, তারা খাদ্য সংকট এড়াতে শত শত ট্রাক সরবরাহ প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, গাজার মানুষের চাহিদার তুলনায় তা অত্যন্ত অপ্রতুল।
কাতারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনাও এখন অনিশ্চিত। মঙ্গলবার দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর এ আলোচনা থমকে গেছে। এর আগে সোমবার জেরুজালেমের উপকণ্ঠে এক বাসস্ট্যান্ডে হামাসের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। ওই ঘটনার পরই দোহায় বিমান হামলা চালানো হয়।

Discussion about this post