ডেস্ক রিপোর্ট: নেতানিয়াহুর গাজা শহর দখলের পরিকল্পনার বাস্তবতা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী অঞ্চলজুড়ে কমপক্ষে ৩৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজা শহরের ফিলিস্তিনিরা আরও বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হচ্ছে। তবুও তারা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৮ বার পরিবারসহ বাস্তুচ্যুত হওয়া আহমেদ হির্জ বলেন, ‘আমি স্রষ্টার নামে শপথ করছি, আমি ১০০ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, তাই আমার জন্য এখানেই মৃত্যুবরণ করা ভালো।’
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি কখনো এখান থেকে যাব না। আমরা দুর্ভোগ, অনাহার, নির্যাতন ও করুণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি এবং আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল এখানেই মৃত্যুবরণ করা।’
আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলা অন্যদেরও একই অনুভূতি। রজব খাদের বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই গাজায় আমাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকতে হবে। ইসরায়েলিরা আমাদের দেহ এবং আত্মা ছাড়া আর কিছুই পাবে না।’
উত্তর-পূর্ব বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া মাঘজুজা সাদা আবার সরে যেতে বাধ্য করার চাপে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ নিরাপদ নয়। গাজা শহর নিরাপদ নয়, উত্তরও নিরাপদ নয়। আমরা কোথায় যাব? আমরা কি নিজেদের সমুদ্রে ফেলে দেব?’
‘আতঙ্কের অবস্থা’
গাজা সিটি থেকে রিপোর্টিং করতে গিয়ে আল জাজিরার হানি মাহমুদ বলেছেন, গাজায় জাতিগতভাবে নির্মূল করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে শুক্রবার ভোর থেকেই বাসিন্দারা ‘আতঙ্কের’ মধ্যে ছিলেন।
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাদের অবশিষ্ট জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। তারা জানে না, তারা কোথায় যাচ্ছে। তারা সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে চায়, যখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের জোর করে বের করে দেবে।আল জাজিরার সাংবাদিক আরও বলেন, ‘ভয়, উদ্বেগ, হতাশা সবই বাড়ছে।’
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাওয়া বলেন, জোরপূর্বক এবং বারবার বাস্তুচ্যুত হতে হতে বাসিন্দারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এবার স্থানান্তরের সম্ভাবনা আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে – হাসপাতাল, পানির সুবিধা এবং অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন জনগণকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই।
ইসরায়েলের বিতর্কিত উত্তেজনা বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দখলদার বাহিনী ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। আজ শনিবার ভোর থেকে কমপক্ষে ৩৬ জনকে হত্যা করেছে – যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২১ জন সাহায্যের আশায় ত্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। একই সময়ে ১ লাখ ৫০ হাজারেও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

Discussion about this post